নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা, আ’লীগ নেতাসহ ৫ আসামি পলাতক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১১ই এপ্রিল ২০১৯ ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা, আ’লীগ নেতাসহ ৫ আসামি পলাতক

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থীকে (১৮) কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ ৫ আসামিকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।মামলা দায়েরের দুদিন পরও এই আসামিরা গ্রেফতার না হওয়ায় ওই ছাত্রীর পরিবার ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।মামলার এজহারভুক্তদের মধ্যে পুলিশ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের চরকৃষ্ণ গ্রামের মৃত কলিম উল্লার ছেলে এসএম সিরাজউদ্দৌলা (৫৫), ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন (৩৫), ও পৌরসভার তুলাতলি এলাকার আবুল বশরের ছেলে যোবায়ের আহম্মেদকে (২০) গ্রেফতার করলেও বাকি সোনাগাজী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মুকছুদ আলম (৪৫), পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের আহসান উল্লার ছেলে নুর উদ্দিন (২০), একই গ্রামের ভূঞাবাজার এলাকার শাহাদাত হোসেন শামিম (২০), রহমত উল্লার ছেলে জাবেদ হোসেন (১৯) এবং ছফরপুর গ্রামের হাফেজ আবদুল কাদেরকে (২৫) গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পাঁচ দিন পার হলেও অভিযুক্ত অধ্যক্ষকে মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নেয়া ও তাদের মামলা তুলে নেয়ার হুমকিদাতা ওই ৫ আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় শিক্ষার্থী-অভিভাবক এবং স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।তাদের অভিযোগ, ঘটনার পর থেকে তারা দৃশ্যমান ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি। সোমবার রাতে নাম উল্লেখ করে মামলা দায়েরের পর থেকে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন।অন্যদিকে ওই মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।গ্রেফতারকৃত অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে ৭ দিনের ও ওই মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও শাহিদুল ইসলামকে ৫ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।এদিকে অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি ও যোবায়ের আহম্মেদকে আদালতে তুলে ৭ দিন রিমান্ড চাইলে আদালত পরদিন বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন।

বিষয়টি জানতে পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মুকছুদ আলমের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।এ বিষয়ে সোনাগাজী-দাগনভূঞা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, এজহারভুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশ এজাহারভুক্ত তিনজনসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাকিদের গ্রেফতার করা হবে।প্রসঙ্গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে মঙ্গলবার তার অস্ত্রোপচারও হয়। অস্ত্রোপচারের পরও তাকে নিয়ে শঙ্কা কাটেনি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে।