
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০১৯, ০:৪৬

ভয়ে কাঁপছিলেন আরিফুল- ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আরিফুল হক একাই ছয়টি লাশ উদ্ধার করেছেন। বিকেল ৫টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত এফ আর টাওয়ারের প্রতিটি তলায় গেছেন অন্তত ১০ বার। বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় তিনি সাংবাদিবদের বলেন, একটু আগেও তিনি এই ভবন ঘুরে এসেছেন। এফ আর টাওয়ারের তিনটি লিফট আছে। এর মধ্যে দুটি লিফট খোলা আছে অন্য লিফটটি বন্ধ রয়েছে। আরিফুল হক প্রথমে একজন পুরুষের লাশ উদ্ধার করেন। বাথরুম থেকে ওই পুরুষের লাশ তিনি উদ্ধার করেন। লাশটি উপুড় হয়ে পড়েছিল বলে তিনি জানান। স্টেশন অফিসার আরিফুল এরপর দুজন নারীর লাশ উদ্ধার করেন। ভবনের সিঁড়ি থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করেন তিনি। ভবনের মেঝে থেকে আরও পুরুষের লাশ উদ্ধার করেন আরিফুল। আরিফুল এরপর এফ আর টাওয়ারের ছাদ থেকে উদ্ধার করেন আরও এক ব্যক্তির লাশ।
আরিফুল হক বলেন, নিজে হাতে তিনি ছয়টি লাশ উদ্ধার করেছেন। মোট ১২টি লাশ উদ্ধারের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুড়ে যাওয়া এফ আর টাওয়ারের সামনে যখন লাশ উদ্ধারের কথা জানাচ্ছিলেন তখন আরিফ নিজেই কেঁপে উঠছিলেন। ধরা গলায় তিনি বলেন, লাশের কথা মনে পড়লে খুব খারাপ লাগছে। আরিফুলের ধারণা, তিনি যাদের লাশ উদ্ধার করেছেন, তারা ধোয়ার কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। রাত ৩টা ৪৫ মিনিটে দেখা যায়, এফ আর টাওয়ারের সামনের সড়কে পড়ে থাকা গ্লাসের টুকরা পরিষ্কার করছেন পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, সকালে এফ আর টাওয়ার আবার তল্লাশি চালানো হবে। এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০ জন মারা গেছে। রাত ৩টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক আদিল হোসেন এ তথ্য জানান। আদিল হোসেন বলেন, নিহতদের মধ্যে ১৮জনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন, পারভেজ সাজ্জাদ, মামুন, নিরস দিবনে রাজা, আমিনা ইয়াসমিন, আব্দুল্লাহ আল ফারুক, মনির হোসেন সরদার, মাকসুদুর, নাহিদুল ইসলাম তুষার, আহমেদ জাফর, রেজাউল করিম কাজী, আতাউর রহমান, মিজানুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান, সালাউদ্দিন, তানজিনা মৌলি, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও রুমকি। দুজনের নাম জানতে পারেনি পুলিশ।
বনানীর বহুতল এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার সূত্রপাত হয় দুপুর ১২টার দিকে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, আগুন লাগার পর ভবন থেকে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। আগুন থেকে বাঁচতে বেশ কয়েকজন ভবন থেকে লাফ দেন। এতে নিহত হয়েছেন শ্রীলঙ্কার এক নাগরিক। অনেকে ভবনের পাশে ঝুলে থাকা তার ধরে নামতে গিয়ে নিচে পড়ে আহত হন। সরকারি উদ্ধারকর্মীরা অনেককেই উদ্ধার করতে সক্ষম হন। তখন ধারণা করা হয়েছিল, মৃতের সংখ্যা খুব বেশি হবে না। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে উদ্ধারকর্মীরা যখন ভেতরে গেলেন, তখনই বের হতে থাকে একের পর এক লাশ। রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকাল ১০টায় গণমাধ্যমে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার ওসি। এর মধ্যে ২৪ জনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর হয়েছে বলেও জানান তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ফায়ার সার্ভিস থেকে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধারের কথা জানানো হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস দুঃখ প্রকাশ করে তালিকা সংশোধন করে ফের মরদেহের সংখ্যা ১৯টি লিখে দেয় বোর্ডে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব