নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহ দান করেছেন সাইফুল ইসলাম (৬৬) নামে এক অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। গতকাল বিকেলে তিনি নিজে কলেজে এসে মৃতদেহ দানপত্রে স্বাক্ষর করে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বারীর কাছে কাগজপত্র হস্তান্তর করেন। মৃতদেহটি দান করে নজির সৃষ্টি করেছেন। তার গ্রামের বাড়ি জেলার পতœীতলা উপজেলার খান্দই গ্রামে হলেও থাকেন উপজেলার নজিপুর পৌরসভার নজিপুর হাসপাতাল রোড় মিত্রশিলাতে।মৃতদেহ দানপত্রে সাইফুল ইসলাম উল্লেখ্য করেছেন, আমি মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে মৃত্যুর পর আমার মৃতদেহটি নওগাঁ মেডিকেল কলেজে দান করলাম। কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার মৃতদেহ দিয়ে কল্যাণমূলক যেকোন কাজ করতে পারবেন। আমার মৃত্যুর পর যতদ্রুত সম্ভব আমার দু’সন্তান আমার মৃতদেহটি কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছেয়ে দিবে। কিন্তু কোন কারণে এমন স্থানে আমার মৃত্যু ঘটে, যেখান থেকে আমার মৃতদেহটি সংগ্রহ করে পাঠানো আমার সন্তানের পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে তারা আমার মৃত্যুর সঠিক তারিখ ও স্থানের নাম অবিলম্বে কলেক কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে এবং সম্ভব হলে তাদের নিজ দায়িত্বে কলেজের কাজে ব্যবহারের জন্য আমার মৃতদেহটি নিতে পারবেন। এব্যাপারে আমার সন্তানের কোন আপত্তি থাকবে না।তিনি আরো উল্লেখ্য করেছেন, আমার চোখ দুুটি আইব্যাংকে দান করা যেতে পারে। তবে শর্ত এই যে, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষীয় মানসিকতার বা চেতনার কাউকে আমার চোখ দেয়া যাবে না। আমার সরলমনে সুস্থ শরীরে, সজ্ঞানে এবং স্বেচ্ছায় এই দানপত্র সম্পাদন করলাম।এসময় উপস্থিত ছিলেন, কবি সাহিত্যিক আতাউল হক সিদ্দিকী, নওগাঁ পিএম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি রায়হান শামীম, সাইফুল ইসলামের মেয়ে শ্রাবণ প্রতীতি এবং ছেলে সৌমি বাবুই সহ অন্যান্যরা।সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি মারা যাওয়ার পর আমার দেহটা পঁচে-গলে মাটির সাথে মিশে যাবে। এতে কোন কাজে আসবে না। আর যদি মেডিকেল কলেজে দান করি এখানকার ছেলেমেয়েরা শরীরের কঙ্কালগুলো নিয়ে পড়াশুনা করতে পারবে। আর এই ধারনা থেকেই মৃত্যুর পর আমার দেহটা দান করেছি।
নওগাঁ পিএম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি রায়হান শামীম বলেন, ইতিহাসের স্বাক্ষী। নওগাঁ মেডিকেল কলেজে মরনোত্তর দেহ দানের সম্মতিপত্র দিলেন এই সাহসী মানুষটি। তার শরীরে হাত দিয়ে ছুয়ে একটু সাহস নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তার এই মহৎ উদ্দেশ্য আল্লাহ যেন কবুল করেন। আমি এরুপ একজন সাহসী, ত্যাগী, মানুষের সাথে ছবি তুলতে পেরে নিজেকে গর্বিত অনূভব করছি। অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা সাইফুল সাহেবকে।নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল বারী বলেন, সাইফুল ইসলাম মৃতদেহ দানপত্রে স্বাক্ষর করে কাগজপত্র দিয়েছেন। তার মৃত্যুর পর দেহ সংগ্রহ করে শিক্ষার্থীদের জন্য ল্যাবে যথাযথ সদব্যবহার করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।