ইভটিজিং-এর প্রতিবাদে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে না ৩'শ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক
মো: তাসলিম উদ্দিন, উপজেলা প্রতিনিধি সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১২ই মার্চ ২০১৯ ০৭:৪৪ অপরাহ্ন
ইভটিজিং-এর প্রতিবাদে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে না ৩'শ শিক্ষার্থী

সরাইলে ইভটিজিং এর প্রতিবাদে উপজেলার অরুয়াইল ইউপির রাজাপুর ও কাকরিয়া গ্রামের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আজ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকে স্কুল ও কলেজে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় এই দুই গ্রামের অন্তত ১২ হাজার মানুষ এখন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কাকরিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ সুন্দর আলী বলেন, আমার এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের আসা-যাওয়ার পথে ইউনিয়নের রাণীদিয়া গ্রামের বখাটে যুবকেরা প্রায়ই উত্যক্ত করে। এ নিয়ে কয়েকবার রাণীদিয়া গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হয়। ইভটিজিং এর বিচার দিলেই ওই বখাটেরা এই মেয়েদের আরো বেশি উত্যক্ত করে। দুইদিন আগে এ নিয়ে প্রতিবাদ করা হলে রাণীদিয়া গ্রামের লোকজন আমার এলাকার লোকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তাই আমার এলাকার দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী স্কু-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ এলাকার মানুষও এখন অবরুদ্ধ। রাজাপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ হানিফ মিয়া বলেন, রাজাপুর ও কাকরিয়া এই দুই গ্রামের মানুষ রাণীদিয়া গ্রামের সামনের সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। তাই রাণীদিয়ার মানুষ নানাভাবে রাজাপুর-কাকরিয়ার মানুষদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে আসছে দীর্ঘ দিন যাবত। রাণীদিয়া গ্রামের অর্ধশতাধিক যুবক মোটরসাইকেল দিয়ে এখানকার সড়কে যাত্রী আনা-নেওয়া করে। তাদের মধ্যে অনেকে আমাদের এলাকার মেয়েদের স্কুল-কলেজে আসা-যাওয়ার পথে নানা খারাপ কথা, কু-ইঙ্গিত প্রদর্শন করে।

এ নিয়ে বিচার চাইতে গেলে রাণীদিয়া গ্রামের প্রভাবশালী লোকদের হাতে নানাভাবে লাঞ্ছিত হতে হয় এই গ্রামের লোকদের। মেয়েদের ওপর চলে ওই গ্রামের বখাটেদের নানা অত্যাচার। তাই নিরুপায় হয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গ্রামের মানুষও রয়েছেন অবরুদ্ধ অবস্থায়।অরুয়াইল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ সাদী বলেন, রাজাপুর ও কাকরিয়ায় এ বিদ্যালয়ের শুধু নারী শিক্ষার্থীই আছে একশ’রও বেশি। সড়কে মোটরসাইকেলে যাত্রী আনা-নেওয়ার কাজে যুবকদের মধ্যে কিছু বখাটে যুবক প্রায়ই মেয়েদের উত্যক্ত করার খবর পাই। কিন্তু লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারি না। আজ রাজাপুর ও কাকরিয়া গ্রামের কোন শিক্ষার্থী স্কুলে আসেনি। শুনেছি তারা ইভটিজিং এর বিচার না পাওয়ায় স্কুল-কলেজে আর না আসার ঘোষণা দিয়েছে।

অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মুখলেছুর রহমান বলেন, রাজাপুর-কাকরিয়া গ্রামে অন্তত ৩০ জন কলেজপড়ুয়া নারী শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা সড়কে চলাচলে প্রায়ই বখাটে যুবকদের দ্বারা ইভটিজিং এর শিকার হয় বলে অভিভাবকেরা জানিয়েছেন। আজ ওই দুই গ্রামের কোন শিক্ষার্থী কলেজে আসেনি। তারা ইভটিজারদের বিচারের দাবিতে স্কুল-কলেজে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোশারফ হোসেন ভূইঁয়া বলেন, স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েদের সড়কে উত্যক্ত করার বিষয় নিয়ে রাজাপুর-কাকরিয়া গ্রামের লোকজন এবং পাশ্ববর্তী রাণীদিয়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে সোমবার বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিস্পত্তি করার চেষ্টা অব্যাহত আছে। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মফিজ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, রাজাপুর, কাককরিয়া ও রাণীদিয়া গ্রামের লোকদের মাঝে সৃষ্ট বিরোধ সমাধানে পুলিশ কাজ করছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব