সরকার-রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালালেই কঠোর ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ৬ই জানুয়ারী ২০১৯ ০১:৪২ অপরাহ্ন
সরকার-রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালালেই কঠোর ব্যবস্থা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারসহ কয়েকটি বিষয়ে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। এসব বিষয়ে সক্রিয় হলেই গ্রেপ্তার করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৈরি করা র‌্যাবের ‘সাইবার নিউজ ভেরিফিকেশন সেন্টার’ এখনো অপপ্রচারকারী চক্রের সন্ধানে কাজ করছে। একইভাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ইউনিট ‘রাউন্ড দ্য ক্লক মনিটরিং’ করে যাচ্ছে। সাইবার প্যাট্রলিংয়ে ধরা পড়েছে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে অপপ্রচারের নতুন তথ্য।

সাইবার গোয়েন্দা সদস্যরা বলছেন, দেশে বা দেশের বাইরে যেই অপপ্রচার চালাবে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তদন্ত করে গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। দেশে সাইবার লিংক বন্ধ করার পাশাপাশি বিদেশ থেকে অপপ্রচার বন্ধেরও চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে বিদেশে শনাক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে কূটনৈতিক চ্যানেলে রাষ্ট্রদূতদের চিঠি দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ ছাড়া ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে কয়েকজন গুজব রটনাকারীকে দেশে ফেরত পাঠাতে বলা হয়েছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, কয়েকটি বিষয়ে সক্রিয় হলেই গোয়েন্দা নজরদারি ও গ্রেপ্তার করা হবে। এগুলোর মধ্যে আছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার, গুজব, মিথ্যা তথ্য, উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট ‘রিয়াল টাইম মনিটরিং’-এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সত্য ঘটনা জনগণের সামনে তুলে ধরে বিভ্রান্তি দূর করা হবে। যেসব পেজ ও আইডি থেকে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার চালানো হবে, সেগুলোর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা এবং বন্ধের ব্যবস্থা করা হবে। এসব পেজ ও আইডির অ্যাডমিন শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘সাইবারজগতে আমাদের নজরদারি ও তদন্ত কার্যক্রম চলছে। এখন অনেক সাড়া পাচ্ছি। অনেকে তথ্য দিচ্ছে। অভিযোগ আসছে। এসব ধরে গুজব বা অপপ্রচারকারী শনাক্ত করা হচ্ছে। নির্বাচনের পরও একইভাবে অ্যাকশন নেওয়া হবে।’ তিনি জানান, র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়নে সাইবার মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। গুজব ও উসকানি বন্ধে কারিগরি সক্ষমতা ও দক্ষতাও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে ও পরে অপপ্রচারের অভিযোগে অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এবং তদন্ত করে সাইবার গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক অপপ্রচারের পুরোভাগে আছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। প্রশাসনের নজর এড়াতে দেশে কনটেন্ট বা ভিডিও তৈরি করে বিদেশ থেকে আপলোড করছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, ওমান ও কাতার থেকে গুজব ছড়াচ্ছে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নতুনভাবে কাজ করছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে একটি প্রকল্পের আওতায় ‘সাইবার নিউজ ভেরিফিকেশন সেন্টার’ নামে র‌্যাবের একটি ফেসবুক পেজ চালু করা হয়েছে। জনগণের দেওয়া তথ্য ও নিজস্ব তদন্তে নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত র‌্যাব ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। তদন্তকারী সূত্র জানায়, বিদেশে থাকা শিবিরের একটি গ্রুপ তাদের ৪৭ লাখ টাকা দেয়। তারা ১৫০টি ওয়েবসাইট তৈরি করে। তারা নিজের ইচ্ছামতো ডকুমেন্টারির আকারে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে এবং প্যারোডি গান তৈরি করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে প্রচার করছিল।

গত ২৯ নভেম্বর গুজব ছড়ানোর অভিযোগে র‌্যাব নেয়ামত উল্লাহ নামে সাবেক এক উপসচিবকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর মগবাজার ও মৌচাক থেকে শিবির নিয়ন্ত্রিত ‘সাইমন শিল্পীগোষ্ঠীর’ তিন সদস্যসহ আটজনকে আটক করে র‌্যাব-২। ২৫ নভেম্বর এনামুল হক মনি নামে দক্ষিণ কোরিয়ায় গবেষণারত এক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তিনি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকাসহ ২১টি গণমাধ্যমের পোর্টাল নকল করে গুজব বা ভুয়া খবর ছড়াচ্ছিলেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, দেশের বাইরে থেকে অপপ্রচারের জন্য পরিচালিত ১৫টি ইউটিউব চ্যানেল ও তিন শতাধিক ফেসবুক আইডি বন্ধ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বন্ধ করেছে শিবির নিয়ন্ত্রিত বিডি পলিটিকো, বাঁশের কেল্লাসহ ৪০টি নিউজ ডোমেইন। নির্বাচনের আগেও শতাধিক পোর্টাল বা নিউজ ডোমেইন বন্ধ করা হয়।

সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম ইউনিটে গত এক বছরে এক হাজার ৬৭০টি অভিযোগ এসেছে। দুই শতাধিক আইডি শনাক্ত করে তাদের অ্যাডমিনদের গ্রেপ্তারে তদন্ত চালানো হচ্ছে। নির্বাচন-পূর্ববর্তী মাসে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির এই শাখা। গত ১২ ডিসেম্বর রবিউল আউয়াল ও জাস্ট হাসান নামে দুই শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করে সাইবার ক্রাইম শাখা। তারা শিবিরের বেশ কয়েকটি পেজের অ্যাডমিন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে কয়েকটি ভুয়া খবর ছড়ানো পোর্টাল বন্ধ করা হয়। এই চক্রের হোতা আব্দুর রহমান খোকাকে খুঁজছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। পুলিশের সিটিটিসির সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে অপপ্রচার বা গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা এখনো চলছে। বেশ কিছু পেজ, পোর্টাল ও গ্রুপ শনাক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের পরেও আমরা দুজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এ নজরদারি অব্যাহত থাকবে।’