আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সামনে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমেই সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রার্থীরা মাঠপর্যায়ে প্রচারণা চালানো, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগদান এবং দূরবর্তী এলাকায় দ্রুত পৌঁছানোর জন্য হেলিকপ্টারসেবার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছেন। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী মৌসুমে হেলিকপ্টারের ভাড়া ও বুকিংয়ে চাপ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৩টি বেসরকারি কোম্পানি হেলিকপ্টারসেবা প্রদান করছে। এদের বহরে রয়েছে প্রায় ৩৫টি হেলিকপ্টার। উল্লেখযোগ্য কোম্পানির মধ্যে রয়েছে স্কয়ার এয়ার, মেঘনা এভিয়েশন, বসুন্ধরা এয়ারওয়েজ, আর অ্যান্ড আর এভিয়েশন, ইমপ্রেস এভিয়েশন, পিএইচপি, আকিজ এবং বেক্সিমকো এভিয়েশন। অপারেটররা জানাচ্ছেন, সাধারণ সময়ে চার সিটের একটি হেলিকপ্টারের ভাড়া গড়ে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা হলেও ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি সময়কালে এই ভাড়া ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। নির্বাচনী প্রচারণার কারণে প্রার্থীরা একই দিনে একাধিক জেলায় ভ্রমণ করতে হয়, ফলে অতিরিক্ত স্ট্যান্ডবাই চার্জ, পারমিট খরচ ও লজিস্টিক ব্যয় যুক্ত হয়।
নির্বাচনে হেলিকপ্টার ব্যবহারের জন্য নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি আচরণবিধি সংশোধন করেছে। এখন শুধু দলীয় প্রধান নয়, সাধারণ সম্পাদক বা সমপর্যায়ের নেতারাও নির্বাচনী প্রচারণায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে হেলিকপ্টার থেকে কোনো প্রচারসামগ্রী বিতরণ বা ব্যানার ঝোলানো যাবে না।
একজন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী গড়ে দিনে তিন থেকে পাঁচটি সমাবেশে অংশ নেন। অনেক ক্ষেত্রে দুর্গম এলাকায় সড়কপথে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। এই পরিস্থিতিতে হেলিকপ্টার হয়ে উঠেছে দ্রুত, নিরাপদ ও কার্যকর একটি বাহন। অপারেটরদের মতে, নির্বাচনী ভ্রমণের পাশাপাশি করপোরেট ও বিদেশি ক্রেতাদের কারখানা পরিদর্শন, ভিআইপি অতিথি পরিবহন, এমনকি বিয়ে বা সামাজিক আয়োজনে হেলিকপ্টারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে খাতের দীর্ঘমেয়াদী বিকাশের জন্য প্রয়োজন অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নীতিগত সহজীকরণ। দেশের সব হেলিকপ্টার উড্ডয়ন মূলত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু হেলিপ্যাড ও অনুমোদিত হেলিপোর্টের সংখ্যা সীমিত। অপারেটররা বলছেন, ব্যক্তি খাতে হেলিপোর্ট নির্মাণ ও হাসপাতাল বা করপোরেট ভবনের ছাদে অবতরণের অনুমতি পেলে সেবা আরও কার্যকর হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নির্বাচনী মৌসুমে হেলিকপ্টারের চাহিদা তাত্ক্ষণিকভাবে বেড়েছে, তবে বাজারের স্থায়ী উন্নয়নের জন্য সরকারি নীতি এবং অবকাঠামো সহায়ক হতে হবে। অন্যথায়, এই খাতের সম্ভাবনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না।