প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ১২:১
রাজনৈতিক সংস্কারের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত সংলাপে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয় এবং এনসিসি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মতামত তুলে ধরে। বিএনপি, সিপিবি, গণফোরাম, এলডিপি, ১২ দলীয় জোটসহ ছয়টি দল স্পষ্টভাবে এনসিসির বিরোধিতা করে এবং প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করে প্রচলিত নিয়োগ আইনসমূহের সংস্কারের দাবি জানায়।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এনসিসি হলে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা কমে যাবে, অথচ কাউন্সিলটি কোনো জবাবদিহির আওতায় পড়বে না। তারা মনে করে, বিদ্যমান আইনগুলোকে আরো শক্তিশালী করে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃত্বের ভারসাম্য রাষ্ট্রপতির দিকে সরিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ অন্যান্য কয়েকটি দল এনসিসির পক্ষে মত দেয় এবং বলে এটি রাজনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত জরুরি।
সংলাপের একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়ায় যখন জামায়াতকে বেশি সময় দেওয়ায় প্রতিবাদে সিপিবি ও গণফোরাম ওয়াকআউট করে। তবে মধ্যস্থতায় তারা আলোচনায় ফিরে আসে। রাজনৈতিক উত্তাপ সত্ত্বেও বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির প্রতিনিধিরা মধ্যাহ্ন বিরতিতে একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতেও দেখা যায়।
জামায়াত বলছে, তিন-চতুর্থাংশ রাজনৈতিক দল যদি এনসিসির পক্ষে থাকে, তাহলে বিরোধী মতগুলো গণভোটের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যেতে পারে। ইসলামী আন্দোলনও গণভোটের দাবি জানায়। এনসিপি জানায়, যারা এনসিসির বিরোধিতা করছে, তারা মূলত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রাখতে আগ্রহী এবং পরিবর্তনের বিপক্ষে।
এদিকে সংবিধান সংস্কার কমিশন দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, স্থানীয় সরকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের সুপারিশ করেছে এবং এসব নিয়োগ এনসিসির মাধ্যমে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে সরকারের নিয়ন্ত্রণ রাখার পক্ষে মত দিয়েছে জামায়াত ও এনসিপি।
এই প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য বিদ্যমান থাকলেও অনেকে একমত যে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিএনপি বলছে, এনসিসির বিকল্প হিসেবে প্রচলিত নিয়োগ আইন সংস্কার করলেই যথেষ্ট।
দিন শেষে, এনসিসি নিয়ে ঐকমত্য না হলে রাজনৈতিক অচলাবস্থার শঙ্কা থেকে যায়। তবে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে ভবিষ্যতে সমঝোতার মাধ্যমে এ নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় কিনা, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
মেটা কিওয়ার্ডস: এনসিসি গঠন, রাজনৈতিক সংলাপ, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, সাংবিধানিক নিয়োগ, রাজনৈতিক সংস্কার