প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:৪২
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে শিক্ষাখাত ছিল দলীয়করণের চরম উদাহরণ। সরকার পরিবর্তনের পরও সেই চিত্র বদলায়নি; শুধু হাতবদল হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর বিভিন্ন সংস্থা এখন চলে গেছে জামায়াতপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের আমলে যারা ক্ষমতার মধু আস্বাদন করেছেন, তারাই এখন রূপ বদলে জামায়াতি ছদ্মবেশে শিক্ষা প্রশাসনকে কব্জায় নিয়েছেন। সচিবালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পদায়ন হচ্ছে বাছাই করা জামায়াতপন্থিদের।
৫ আগস্টের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একজন সিনিয়র সচিবের হাত ধরেই শুরু হয় শিক্ষাখাতের জামায়াতিকরণ। তার সময়ে বিভিন্ন বোর্ড, অধিদফতর, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টরসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জামায়াতপন্থিদের বসানো হয়। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর মাদরাসা শিক্ষাখাতকে পুরোপুরি জামায়াতের আখড়ায় পরিণত করেন। ১৪ আগস্ট তার চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও জামায়াত এখন তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য তৎপর।
জামায়াতপন্থি নেতা ও সাবেক আওয়ামী সুবিধাভোগী মাওলানা দেলোয়ার হোসেন আজিজী এই প্রক্রিয়ায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। হাসিনা সরকারের সময় তিনি শেখ মুজিবের কবর জিয়ারত করে আজীবন ক্ষমতায় রাখার মোনাজাত করেছিলেন, কিন্তু ৫ আগস্টের পর জামায়াতি ভূমিকায় আবির্ভূত হয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনে নামিয়েছেন। সম্প্রতি রাজধানীতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ-প্রত্যাশী জোটের নামে সড়ক অবরোধ করেন তার নেতৃত্বে থাকা শিক্ষকরা। অথচ যেসব দাবি নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে, সেগুলো ইতোমধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন।
বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব মো. জাকির হোসেন জানান, শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসবভাতা, চিকিৎসাভাতা ও বাড়িভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব বাস্তবায়নের কাজ চলছে। কিন্তু কিছু গোষ্ঠী সাধারণ শিক্ষকদের ঢাল বানিয়ে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পেছানো।
বিএনপিপন্থি ও নিরপেক্ষ শিক্ষক সংগঠনগুলোও সন্দেহ করছে, এ আন্দোলনের পেছনে নির্বাচন বানচালের পরিকল্পনা আছে। কারণ নির্বাচনের প্রস্তুতির সময় জামায়াত–এনসিপি ও আরও কিছু দল একই ধরণের কর্মসূচি নিচ্ছে।
শিক্ষাখাতের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনকে অবিলম্বে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান ধ্বংস হবে এবং রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।