রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) পুলিশ সপ্তাহ ২০২৫–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে "যুদ্ধাবস্থা" বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান, যেন কোনো অশুভ শক্তি দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা এখন এক ধরনের যুদ্ধাবস্থায় রয়েছি। অশুভ শক্তি আমাদের স্বপ্ন ও জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশের সচেতনতা ও প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব এবং ন্যায়বিচারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছিল। রাজনৈতিক স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলাফল সাধারণ মানুষের ক্ষোভ এবং পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়া। “অনেক সৎ অফিসার অন্যায় আদেশ পালনের কারণে জনরোষের শিকার হয়েছেন। আমরা সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই,” বলেন ড. ইউনূস।
ড. ইউনূস আরও বলেন, স্বৈরশাসনের পতনের পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পুলিশকে শক্তিশালী ও জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম একটি বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জনগণ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এই নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “সব প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। ভোটাররা যেন নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি পুলিশের দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া ভবিষ্যতে পুলিশকে দলীয়ভাবে ব্যবহারের প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগে এবং পরে যাতে কোনো সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা না ঘটে, সে জন্য পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিয়েও বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পুলিশকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত হলেই দেশ আরও এগিয়ে যাবে।”
বক্তব্যের শেষাংশে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা একটি বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়ের ভিত্তিতে গঠিত দ্বিতীয় বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখছি। জুলাইয়ের অভ্যুত্থান আমাদের সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ যদি আমরা কাজে না লাগাতে পারি, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।”