জীবিতদের সম্মান দিতে স্বাধীনতা পুরস্কারের নিয়ম পরিবর্তন চাই-প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকার হরণ, দুর্নীতি ও গুম-খুনের মাধ্যমে দেশে একটি অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ইউনূস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মত্যাগে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ পেয়েছি। তিনি মরণোত্তর পুরস্কার প্রথা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, "জীবিত ব্যক্তিদের সম্মান দেওয়াই উচিত, যাতে তারা এই স্বীকৃতির আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।"

২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন সাত গুণী ব্যক্তি। মরণোত্তর সম্মাননা পেয়েছেন অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম, মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ, নভেরা আহমেদ, স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও আজম খান। জীবিত অবস্থায় পুরস্কার পেয়েছেন বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর। প্রতিবাদী তারুণ্যের জন্য মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়েছে আবরার ফাহাদকে।

ইউনূস তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, "আমাদের অকৃতজ্ঞ হতে হবে না। যারা জাতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্মানিত করেছেন, তাদের জীবদ্দশায়ই স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন।" তিনি পুরস্কারপ্রাপ্তদের 'বাংলার সূর্যসন্তান' আখ্যা দিয়ে বলেন, তাদের অবদান জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে দেশে ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়াই এখনকার প্রধান চ্যালেঞ্জ।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ইউনূসের এই বক্তব্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই জীবিত ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদানের বিষয়ে একমত পোষণ করেন। অনুষ্ঠানের শেষে প্রধান উপদেষ্টা পুরস্কারপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।