নওগাঁ শহরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা ও তুলসীগঙ্গা নদীর মধ্যে তুলসীগঙ্গার অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। একসময়ের খরস্রোতা এই নদী দখল ও দূষণের কবলে পড়ে আজ মৃতপ্রায়। বর্ষায় কিছুটা পানি জমলেও শুষ্ক মৌসুমে তা শুকিয়ে যায়। তিন বছর আগে খনন করা হলেও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফেরেনি। বরং কচুরিপানার স্তূপে ভরে গেছে নদীর বুক। স্থানীয়রা মনে করেন, যথাযথ উদ্যোগ নিলে নদী পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব, যা কৃষি, পরিবেশ এবং জীবনযাত্রার জন্য অপরিহার্য।
জানা গেছে, তুলসীগঙ্গা নদীর উৎপত্তি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা থেকে। এটি নওগাঁর তিলোকপুর ইউনিয়নের ছিটকিতলা (ত্রিমোহনী) এলাকা দিয়ে প্রবেশ করে রানীনগরের চককুতুব রেগুলেটর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। একসময় এই নদীর পানি কৃষিকাজ, মাছ শিকার ও নৌপরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হতো। পালতোলা নৌকা চলত, ব্যবসায়ীরা ধান-পাট পরিবহন করতেন। আশপাশের হাট-বাজারগুলোও নদীকেন্দ্রিকভাবে গড়ে উঠেছিল।
তবে সত্তরের দশকে ছিটকিতলায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পর থেকেই নদী তার প্রবাহ হারাতে শুরু করে। বর্তমানে এর পানিতে দুর্গন্ধ, কচুরিপানার স্তূপ এবং মশা-মাছির উপদ্রব ব্যাপকভাবে বেড়েছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ না থাকায় জলজ প্রাণীর বসবাসও কঠিন হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, ছিটকিতলায় বাঁধের পরিবর্তে রেগুলেটর নির্মাণ করা হলে ছোট যমুনার সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে এবং বর্ষায় পানিপ্রবাহ ঠিক থাকবে।
ভবানীপুর এলাকার বাসিন্দা সদিকুর রহমান ও আহসান আলী জানান, নদী খননের পরও তারা কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। পানি এতটাই দূষিত যে গোসল কিংবা গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা যায় না। নদীতে আর আগের মতো মাছও নেই।
নওগাঁর সমাজসেবক এমএম রাসেল বলেন, একসময় এই নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা চলত, ব্যবসা-বাণিজ্য হতো। কিন্তু এখন তা কেবল অতীত। দখল-দূষণে নদী সরু হয়ে গেছে, স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। ছিটকিতলায় রেগুলেটর নির্মাণ করা হলে হয়তো নদী তার প্রাণ ফিরে পাবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁর সাধারণ সম্পাদক নাইচ পারভীন বলেন, অবৈধ স্থাপনা, ময়লা-আবর্জনা নদীকে ধ্বংস করছে। সচেতনতার অভাব ও সরকারি নজরদারির দুর্বলতার কারণেই নদীর এই দুর্দশা। নদী সচল না থাকলে জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান জানান, নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে প্রায় দুই কিলোমিটার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে, যা ব্যয়বহুল। তবে ছিটকিতলায় রেগুলেটর নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।