বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ লিমিটেড’-এ এক বড় ধরনের আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্টের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার জালিয়াতি করেছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৭১১ কোটি টাকা নগদ তুলে নেওয়া হয়েছে এবং ৬৪৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২৫ হাজারেরও বেশি কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এটি একটি ডিজিটাল জালিয়াতি হিসেবে চিহ্নিত হলেও, এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে ডাক অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে দীর্ঘ এক মাসের আলোচনা চলার পরও এখনও এ বিষয়ে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বর্তমানে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তারা আইনজীবীর পরামর্শ নিচ্ছে।
নগদ লিমিটেডের প্রশাসক জানিয়েছেন, ৪১ জন পরিবেশক, ২৪ হাজার ৯৭ জন এজেন্ট এবং ৬৪৩ জন বিক্রয় কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ই-মানির বিপরীতে নগদ অর্থ তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, ৩ হাজার ৮৩১টি মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট বাতিল করা হয়েছে। এমন এক ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এখন তদন্ত চালাচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, নগদের ব্যবসা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেবা উদ্বোধন করেছিলেন। তবে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ব্যবসা শুরু করেছিল এবং এর পরিচালনায় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংসদ সদস্যরা জড়িত ছিলেন। তাদের প্রভাবের কারণে প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভাতা বিতরণে একচ্ছত্র সুবিধা পায়, যা পরে বড় ধরনের অনিয়মে রূপ নেয়।
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগ করে নগদে। তখন থেকেই এই জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসে এবং তদন্ত শুরু হয়। ইতিমধ্যে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে ডাক অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করছে, তবে মামলা দায়েরের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
নগদের এ জালিয়াতির ঘটনা ডিজিটাল আর্থিক খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে এবং দেশের ইলেকট্রনিক অর্থ ব্যবস্থায় নতুন সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।