রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য জানান রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, "এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনের বদলে একটি নতুন, অধিক বাস্তবসম্মত ও নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণকারী আইন তৈরি করা হবে।" এর আগে, ৩ অক্টোবর, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের পক্ষে মন্তব্য করেছিলেন এবং একে পরিবর্তন করে নতুন আইনের পক্ষে কথা বলেছেন।
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রথম ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণীত হয়েছিল। তবে এই আইনটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে, বিশেষ করে সাংবাদিকদের স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এর পর ২০২৩ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছিল, তবে সেখানেও বিতর্ক কমেনি। সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছিল যে, এটি জনস্বার্থের চেয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রণীত হয়েছে।
এ মাসের শুরুতে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামও এই আইন বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার মতে, নতুন আইনে সাইবার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে, তবে নাগরিকদের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার যেন ব্যাহত না হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে, আইন মন্ত্রণালয় ৩০ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, সাইবার নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া ‘স্পিচ অফেন্স’ (মুক্তমত প্রকাশ) সম্পর্কিত সব মামলা প্রত্যাহার করা হবে এবং এসব মামলায় গ্রেপ্তারকৃতদেরও মুক্তি দেওয়া হবে। বর্তমানে, দেশের সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট পাঁচ হাজার ৮১৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে, এর মধ্যে ১,৩৪০টি মামলা 'স্পিচ অফেন্স' সম্পর্কিত।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা নাগরিকের বাকস্বাধীনতা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে একটি ইতিবাচক সংকেত দিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।