পদ্মার দুই পাড়ে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে উদ্বোধনের পরদিন যান চলাচল শুরু হয়েছে স্বপ্নের সেতুতে।কথা ছিল রোববার সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতু পার হওয়ার সুযোগ মিলবে। তবে নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগেই ৫টা ৫০ মিনিটে আমিনুল ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী মাওয়া টোল প্লাজার ৩ নম্বর লেইনে ১০০ টাকা টোল দিয়ে পদ্মাসেতু পার হন।
আমিনুল ইসলাম জানালেন, কামরাঙ্গীর চর থেকে তারা বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে এসেছেন পদ্মা সেতু পার হওয়ার জন্যই। টোল প্লাজা খোলার অপেক্ষায় ছিলেন ভোর থেকে। তার মোটর সাইকেল সামনে থাকায় প্রথম সুযোগটা তিনিই পেয়ে গেছেন।
৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। এই ২১টি জেলার মাওয়া রুট ব্যবহারকারী বাসসহ যানবাহনগুলো এতদিন ফেরিতে পারাপার হত। এখন চলছে সেতুতে, যার অপেক্ষা বহুদিনের।
শনিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরিয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাওয়া প্রান্তে টোল দিয়ে তিনিই হন এ সেতুর প্রথম যাত্রী।
রোববার সকাল থেকে সবার জন্য সেতু খুলে দেওয়ার কথা থাকায় প্রথম যাত্রার অভিজ্ঞতা স্মরণীয় করে রাখার অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। সে কারণে অনেকেই মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন বাহন নিয়ে রাতে এসে অপেক্ষা করছিলেন সেতুর দুই প্রান্তে।ভোরের দিকে মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় যানবাহনের দীর্ঘ কিউ তৈরি হয়ে যায়। ৬টার আগে আগে সকালে সেতুর দুই প্রান্তের ১৪টি টোল গেইট খুলে দেওয়া হয়।
রোববার থেকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল
প্রকল্প পরিচালক শফিকুল বলেন, “শুরুর দিন স্বাভাবিকভাবেই যানবাহনের ব্যাপক চাপ থাকবে। আমাদের টোলপ্লাজার কর্মীদের সেভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, তারা ভিড় সামলাতে পারবে। এছাড়া সেতু রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্যও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।”সকাল থেকেই দারুণ উৎসাহ নিয়ে হাতে হাতে টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছে মোটরসাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন। তবে তিন চাকার বাহনের এ সেতুতে ওঠার অনুমতি নেই।
সেতুতে ছোট বাসে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে ২০০০ টাকা এবং বড় বাসে ২৪০০ টাকা টোল দিতে হচ্ছে। ছোট ট্রাকের টোল ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২১০০-২৮০০ টাকা, বড় ট্রাকে ৫৫০০ টাকা। পিকআপের টোল ১২০০ টাকা।
কার ও জিপের টোল ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১৩০০ টাকা। মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে লাগছে ১০০ টাকা।পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতকারী বেশিরভাগ পরিবহনের বাস ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকার সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে।
বৃহ্ত্তর দক্ষিণবঙ্গ কোচ ও বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শনিবার জানান, সায়েদাবাদ থেকে আগে যেসব বাস ছেড়ে যেত, রোববারও সেগুলো ছেড়ে যাবে।“আমাদের এদিক থেকে চলাচলকারী বাসগুলো বন্ধ ছিল অনেকদিন। সেই সব বাসই যাবে। এছাড়া হানিফ, গ্রিনলাইনসহ কয়েকটি পরিবহনের বাসও যাওয়ার কথা রয়েছে।”
গ্রিনলাইন পরিবহনের মহাব্যবস্থাপক মো. আবদুস সাত্তার শনিবার জানান, পদ্মা সেতু হয়ে সাতক্ষীরা, বেনাপোল, খুলনা, যশোর, বরিশাল ও কুয়াকাটায় যাবে তাদের বাস।“আমাদের সব গাড়িই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। রুট পারমিট নেওয়া ছিল, কাল সকাল থেকেই আমরা এই রুটে বাস চালাব।”
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।