শ্রীমঙ্গলে দ্বিতীয় দিনের মতো দলিল লেখকদের কর্মবিরতি, দাতা-গ্রহীতাদের ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
এহসান বিন মুজাহির থানা প্রতিনিধি শ্রীমঙ্গল , মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ ২০২৪ ০৯:৫০ অপরাহ্ন
শ্রীমঙ্গলে দ্বিতীয় দিনের মতো দলিল লেখকদের কর্মবিরতি, দাতা-গ্রহীতাদের ভোগান্তি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে গতকালের ন্যায় মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করছেন বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদস্যরা।


এর ফলে একদিকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছর, অন্যদিকে জমি নিবন্ধন করতে আসা দাতা-গ্রহীতারা চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। 


দলিল লেখকদের অভিযোগ, শ্রীমঙ্গলে সম্প্রতি আসা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর প্রতি দলিলের মূল্যের উপর ১% থেকে ৫% পর্যন্ত কমিশন না দিলে কোনো দলিল করতে চান না। তাছাড়া প্রতিটি দানপত্র দলিল, এওয়াজ দলিল, ওছিয়তনামা দলিল, বায়না দলিল, নাদাবি দলিল, বাটোয়ারা দলিল, হেবা দলিল থেকে ৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে থাকেন। কথা অনুযায়ী তাকে টাকা না দিলে বিভিন্ন আইনী ফাঁক-ফোকর আর অজুহাত দেখিয়ে দলিল করতে চান না। এছাড়াও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি গত দুই মাসে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। দলিল লেখকদের কেউ শংকর কুমার ধরের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে চাইলে তিনি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যসহ অসদাচরণ করেন।


শ্রীমঙ্গল উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান জানান, সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর গত ২২ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গল সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে যোগদানের পর থেকে দলিলের দাতা-গ্রহীতা ও লেখকদের সাথে অশালীন আচরণ এবং অনৈতিক ও অযৌক্তিক লেনদেন করে আসছেন। তিনি দলিল রেজিস্ট্রিতে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন এবং টাকা না পেলে দলিল আটকে দেন। অথচ দেশের সকল জেলা, উপজেলা, সিটি এলাকায় উত্তরাধিকারী দলিল করতে আইনে কোনো বাধা নেই। কিন্তু আমাদের এখানে উত্তরাধিকারী সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করতে হলে সাব-রেজিস্ট্রারকে আলাদাভাবে সন্তুষ্ট করতে হবে। এ ছাড়া দলিল রেজিস্ট্রি করতে গেলে তিনি এটি নেই, সেটি নেই বলে হয়রানি করেন। বিভিন্ন সময়ে দলিল লেখকরা এর প্রতিবাদ করলেও কোনো সমাধান হয়নি। উল্টে তাদের সাথে অসদাচরণসহ নানা কারণ দেখিয়ে দলিল আটকে দেন তিনি। তাই বাধ্য হয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল দলিল লেখকদের সাথে নিয়ে গতকাল থেকে কর্মবরিত পালন শুরু করি, আজও অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি সমাধানের আগ পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরা দলিল লেখা বন্ধ রাখবো। 


এদিকে গতকাল থেকে শুরু হওয়া দলিল লেখকদের কর্মবিরতি চলমান থাকায় জমি নিবন্ধন করতে আসা দাতা-গ্রহীতারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আবার অনেকে দূরান্ত থেকে এসে দলিল না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।


কর্মবিরতির কারণে জমি নিবন্ধন করতে আসা জমির দাতা ও গ্রহীতারা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছেন এমন অভিযোগের ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর বলেন, কর্মবিরতি বা যেকোনো কর্মসূচি পালন করা প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমি তো কারো অধিকারে বাধা দিতে পারি না। দলিল লেখকদের কোনো অভিযোগ বা দাবি-দাওয়া থাকলে তারা আগে আমাকে বলতে পারতো, তারা আমাকে না বলে কর্মবিরতি পালন করছেন, এখন তো আমি তাদের কিছু বলতে পারি না।


উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে দলিলের রেজিস্ট্রি ফি বেশি হলে তো দিতেই হবে। সব দলিলের রেজিস্ট্রি ফি এক না। সরকারি বিধান অনুযায়ী সব টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হয়। আমার কাছে নগদ টাকা দেওয়ার কোনো বিধান নেই, সুযোগও নেই। আমি সরকারি ফি'র বাইরে কারো কাছ থেকে বাড়তি কোনো টাকা নেইনি।