জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি ঘিরে আদালত চত্বরে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আদালতের ভেতরে ও বাইরে কঠোর নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে মূলফটকে আদালত চত্বরে প্রবেশের পূর্বে সবার পরিচয়পত্র চেক করে দেখা হচ্ছে। আইনজীবী, সেবাপ্রত্যাশী ও আদালতের কর্মকর্তাদের তল্লাশির মাধ্যমে আদালতে প্রবেশ করতে দেয়া হলেও, অপরিচিত কাউকেই প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, আর্মড পুলিশ। এসব এলাকায় পথচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ হাইকোর্টের আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। অথচ এর আগের দিন বুধবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের বাইরের তিনটি পৃথক স্থানে মোটরসাইকেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই ধরনের ঘটনাকে আজ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার আজকে জামিন শুনানির রায়কে ঘিরে যে কোনো ধরনের অপচেষ্টা, নাশকতা ঠেকাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ সতর্ক অবস্থান।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, নাশকতার উদ্দেশ্যেই অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা গতকাল সুপ্রিম কোর্ট এলাকার মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ওই ঘটনাকে গুরুত্ব দিয়ে আজ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এর আগে শুনানির কথা মাথায় রেখে বুধবারই (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকেই আদালত ও তার আশেপাশের এলাকায় বাড়ানো হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কর্তব্যরত ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাদিয়া ফারজানা গণমাধ্যমকে বলেন, এর আগে খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানির দিন আইনজীবীরা আদালতে কী ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন সেটা সবাই দেখেছি। তখন হয়তো অনেক অপরিচিতও আদালতে প্রবেশের সুযোগ নিয়েছিলেন। আজ জামিন শুনানিকে ঘিরে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অপরিচিত কাউকে কার্ড ছাড়া ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
আজ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার এ জামিন শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সুপ্রিম কোর্টের কার্যতালিকায় আবেদনটি শুনানির জন্য ১২ নম্বরে রয়েছে। এদিন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে আদালতে প্রদিবেদন উপস্থাপন করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাতেই বিএসএমএমইউ থেকে খালেদার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদনটি সিলগালা করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়।
মেডিকেল প্রতিবেদনের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। আপনারা সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যা বলার তিনিই বলবেন।’ খালেদা জিয়ার পক্ষে আজ শুনানি করতে আইনজীবী প্যানেলে রয়েছেন- অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ, এজে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, ফারুক হোসেন ও একেএম এহসানুর রহমান। দুদকের পক্ষে রয়েছেন খুরশীদ আলম খান। আর রাষ্ট্রপক্ষে আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন জমা দিতে না পারায় আদালত ১২ ডিসেম্বর (আজ) পর্যন্ত জামিন শুনানি মুলতবি করেন। এই সময়ের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার সবশেষ প্রতিবেদন দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন একই আদালত।
ইনিউজ ৭১/এম.আর
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।