অস্ত্র আইনে পুলিশের দায়ের করা একটি মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন চট্টগ্রামের শিক্ষানবীশ আইনজীবী সমর কৃষ্ণ চৌধুরী। একবছর আগে ‘অস্ত্র ও ইয়াবাসহ’ সমর কৃষ্ণকে গ্রেফতার করা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। একই গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী এক ব্যক্তির প্ররোচনায় পুলিশ সমরকে ফাঁসানোর অভিযোগ করেছিল তার পরিবার। তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে সমরের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। বুধবার (২৮ আগস্ট) চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো.ইসমাইল হোসেন পিবিআইয়ের প্রতিবেদন গ্রহণ করে সমরকে মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন।
সমর কৃষ্ণের আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘পিবিআই এর তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে অস্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে আসামির কোনো সম্পৃক্ততা পাননি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছেন। ওই প্রতিবেদনের ওপর আজ (বুধবার) শুনানি হয়েছে। শুনানিতে আমরা বলেছি- সমর কৃষ্ণ পুরোপুরি নির্দোষ। গ্রামে জায়গাজমি নিয়ে বিরোধের জেরে একজন প্রবাসী পুলিশকে ব্যবহার করে তাকে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন।’
আদালতের আদেশ ঘোষণার পর কান্নাজড়িত কন্ঠে সমর কৃষ্ণ চৌধুরী বলেন, ‘মিথ্যা মামলা করে পুলিশ আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আমাকে জেল খাটতে হয়েছে। আমার পরিবারকে কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিক-আইনজীবীসহ সারাদেশের মানুষ আমার পাশে ছিল। পিবিআই তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করেছে। দুঃসময়ে যারা আমার পাশে ছিল, আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আর যারা আমাকে বিনাদোষে হয়রানি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনের আশ্রয় নেব। আমি তাদের বিচার চাই।’
২০১৮ সালের ২৭ মে বোয়ালখালী থানা পুলিশ সমর কৃষ্ণ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘীর পাড় এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তাকে গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তার গ্রামের বাড়ি থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে পুলিশ বোয়ালখালী থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করে। গ্রেফতারের পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় ওঠে। সমরের পরিবার দাবি করে আসছিল-তাদের গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী সঞ্জয় দাশের সঙ্গে তার প্রতিবেশি স্বপন দাশের জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ আছে। স্বপন দাশকে আইনি পরামর্শ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সঞ্জয় দাশ পুলিশকে ব্যবহার করে সমরকে দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি এস-এম-মনিরুজ্জামানের প্ররোচনায় বোয়ালখালী থানার তৎকালীন ওসি হিমাংশু কুমার দাশের ইন্ধনে সমরকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিল সমরের পরিবার। ওই বছরের ২ জুলাই সমরের মেয়ে অলকানন্দা চৌধুরী ও তমালিকা চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে তার বাবার মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এরপর ১২ জুলাই সমর জামিনে মুক্তি পান। জামিনে মুক্ত হয়ে সমর গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, গ্রেফতারের পর পুলিশ তাকে ক্রসফায়ারে দিতে চেয়েছিল।
সমরকে গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে বিতর্কে পড়া ডিআইজি মনিরুজ্জামানকে ওই বছরের জুলাই মাসে বদলি করা হয়। এছাড়া সমরকে ফাঁসানোর অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পুলিশ সুপার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে নেমে বোয়ালখালী থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তা এতে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় কমিটি। অভিযুক্তরা হলেন- ওসি হিমাংশু দাশ রানা, এসআই আতিকুর রহমান ও এসআই আরিফুল ইসলাম। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই বছরের ১৯ জুলাই আরিফুর ও ১১ আগস্ট আতিকুরকে প্রত্যাহার এবং ২৫ আগস্ট হিমাংশুকে বোয়ালখালী থানা থেকে বদলি করা হয়। এদিকে সমর কৃষ্ণের বিরুদ্ধে মাদক আইনে দুটি ও অস্ত্র আইনে একটিসহ তিনটি মামলা তদন্তের জন্য ২০১৮ সালের ৩০ মে পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআই তদন্ত করে তিনটি মামলাতেই সমরের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। গত জুলাই (২০১৯) মাসে মাদক আইনের দুটি মামলায় সমরকে অব্যাহতির আদেশ দেন আদালত। এরপর অস্ত্র মামলায়ও চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি পেলেন সমর কৃষ্ণ।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।