গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষায় দেশ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এর মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের প্রথম বিচারের রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। মামলার অন্যতম আসামি ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিচার চলাকালে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন— যা ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর প্রথম ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০২৪ সালের ১৪ আগস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় জমা পড়ে। এরপর তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১২ মে প্রতিবেদন দাখিল করা হয় প্রধান প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে। এর ভিত্তিতে ১ জুন ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন, যা আদালত একই দিন আমলে নেয়। পরবর্তীতে ১০ জুলাই তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপক্ষ ৮১ জন সাক্ষী তালিকাভুক্ত করে, যার মধ্যে ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আবদুল্লাহ আল-মামুন নিজেই আদালতে দোষ স্বীকার করেন এবং ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগপত্র ছিল ১৩৫ পৃষ্ঠার, যার সঙ্গে আরও ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার প্রমাণাদি ও নথি যুক্ত ছিল।
অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনা গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন, যা পরবর্তীতে দেশব্যাপী সহিংসতার সূত্রপাত ঘটায়। সেই সময় তৎকালীন সরকার ও দলীয় সন্ত্রাসীদের সহায়তায় ছাত্র-জনতার ওপর পরিকল্পিতভাবে হত্যা, নির্যাতন ও হামলা চালানো হয়।
এছাড়া হাসিনার নির্দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এই নির্দেশ বাস্তবায়নে সহায়তা করেন বলে রাষ্ট্রপক্ষ দাবি করেছে।
মামলার পাঁচটি প্রধান অভিযোগের মধ্যে রয়েছে— রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা, ঢাকার চানখাঁরপুলে গুলি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা, আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যা ও লাশ পোড়ানো, উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এসব অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে এবং এর মাধ্যমে অভিযুক্তরা গণঅভ্যুত্থয়ের সময় পরিকল্পিতভাবে নিরীহ মানুষ হত্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
রায়ের দিন ঘোষণার খবরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও মানবাধিকার সংগঠনও রায় ঘোষণার দিকে নজর রাখছে।