প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১২
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত কনডেম সেলে না রাখার বিষয়ে হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছে আপিল বিভাগ। আগামী ২৮ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানি হবে বলে জানা গেছে। রোববার (১৯ অক্টোবর) আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন। আদালতের এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে দেশের আইনি মহলে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ১৩ মে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ রায় দেন। রায়ে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামির বিরুদ্ধে আপিল, রিভিউ ও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। আদালত আরও নির্দেশ দেন, বর্তমানে যারা কনডেম সেলে রয়েছেন তাদের দুই বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে সাধারণ সেলে স্থানান্তর করতে হবে।
হাইকোর্টের ওই রায় দেশের কারাগার ব্যবস্থাপনা ও মানবাধিকার প্রশ্নে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, যদি কোনো বন্দিকে স্বাস্থ্যগত কারণ বা সংক্রামক রোগের জন্য পৃথকভাবে রাখার প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটি আদালতের অনুমতি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানির মাধ্যমে করতে হবে।
তবে হাইকোর্টের এই রায়ের পরপরই রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে এবং ২০২৪ সালের ১৫ মে চেম্বার আদালত রায়ের কার্যকারিতা সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেয়। পরে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল থাকে। এদিকে রায় কার্যকর না হওয়ায় মানবাধিকারকর্মীরা এর সমালোচনা করেন এবং বলেন, কনডেম সেল মূলত বন্দিদের জন্য একটি মানসিক নির্যাতনের পরিবেশ তৈরি করে।
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির পক্ষে একটি রিট আবেদন দাখিল করেন আইনজীবী শিশির মনির। তারা হলেন চট্টগ্রাম কারাগারের জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারের আব্দুল বশির এবং কুমিল্লা কারাগারের শাহ আলম। তাদের সকলের মামলাই বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন।
রিটে উল্লেখ করা হয়, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত কনডেম সেলে রাখা সংবিধান ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। এই অবস্থায় আদালতের রায় আইন ও মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ এক নজির স্থাপন করে।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি, কারাগারের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কারণে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের আলাদা সেলে রাখা প্রয়োজন। এখন আপিল বিভাগের শুনানিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায়ই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতে কনডেম সেলের নীতিমালা কীভাবে কার্যকর হবে।