বছর বছর নদী ভাঙন, আশাশুনিতে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি উপজেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষিরা
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ২২শে নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫৬ অপরাহ্ন
বছর বছর নদী ভাঙন, আশাশুনিতে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যা

আশাশুনি উপজেলায় দিনে দিনে বাড়ছে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা।বছর বছর নদী ভাঙন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, শিল্পায়নের অভাব, পর্যন্ত পরিমান ব্যাংক লোন না পাওয়া, সুদে মহাজনদের অত্যাচার, এনজিও গুলো মানবিক না হওয়া, সর্বোপরি অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষের কারনে সৃষ্টি হয়েছে এ অবস্থার। সুন্দরবনের পাদদেশে অবস্থিত সাতক্ষীরা জেলার একটি উপজেলা আশাশুনি।


আশাশুনি উপজেলা ১১ টি ইউনিয়ন ১৪৩ টি মৌজার ২৩৭ টি গ্রামের লোক সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এর ৮৫ ভাগ মানুষই কৃষিনির্ভর।মাত্র কয়েক বছর আগেও এ উপজেলার সর্বত্র ধান,পাট,আখসহ উৎপাদন হত প্রচুর পরিমান ফসল।এখন ধানের জায়গা দখল করেছে অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষ।খাদ্যাভাবে গরু নেই কৃষক কিংবা গেরস্থের গোয়ালে।বর্তমানে পাট সহ অন্যান্য ফসল চাষ করে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠছে না। ফলে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।আশাশুনির বিভিন্ন এলকা দিয়ে প্রবাহিত নদী গুলোর ভাঙ্গনে প্রতিবছর শত শত একর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গৃহহীন হয়ে পড়ে বহু মানুষ।এক সময় সর্বশান্ত হয়ে ফুটপতে অথবা বস্তিবাসি হতে বাধ্য হয় অনেকে।


অপর দিকে খরা,অনাবৃষ্টি,অতিবৃষ্টি,ঝড়,টর্নেডসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে কৃসকরা ফসল মার খাচ্ছে॥উপজেলার শতকরা ৬০ ভাগ কৃষকের কোন গবাদিপশু নেই।হালের বলদ নেই শতকরা ৭৫ ভাগ কৃষকের।ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের জমিতে হালচাষ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।এমনকি আর্থিক সংকটে ধানবীজ সংগ্রহ,কীট নাশক ও সার সংগ্রহ করা দুরহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।সেচ বাবদ অর্থ ব্যয় কৃষকদের জীবনে দেখা দেয় বোঝা হিসাবে। 


ব্যাংকিং লেনদেনের কারনে উপজেলার বহু কৃষক পরিনত হয়েছে নিঃস্ব আর ভূমিহীন।হয়রানির শিকার সহ সহজ শর্তে ব্যাংকিং লোন না পেয়ে কৃষকরা বাধ্য হয়ে গ্রামের মহাজনদের কাছে।মহাজনরা চড়া সুদে লোন- দেওয়ার নামেসহজ সরল কৃষকদের কাছ থেকে সাদা কাগজে টিপ ও স্বাক্ষর করে রাখে।সময় মতো লোন পরিশোধ করতে না পারলে এক সময় জমি হয়ে যায় মহাজনের। 


এ সব থেকে পিছিয়ে নেই মাঠ পর্যায়ে কাজ করা এনজিও এবং হঠাৎ করে গড়ে উঠা সমবায় সমিতি । জনসাধারন অনেকে এস  সমিতিকে পকেট সমিতি নামে অভিহিত করেন। আশাশুনির ১১ টি ইউনিয়নের ধানের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিত ভাবে চিংড়ী চাষ হয়ে আসছে। 


ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা জমিতে চিংড়ী চাষ করতে না চাইলেও জোড় করে চিংড়ী চাষীরা জোর করে লবন পানি তুলে চিংড়ী চাষ করছে।ফলে কৃষকরা হয়ে পড়ছে বেকার ঋনগ্রস্ত।বাধ্য হচ্ছে বিক্রি করতে তাদের জমি।এ ভাবে প্রান্তিক কৃষকরা পরিনত হচ্ছে ভূমিহীন কৃষকে। 


এছাড়াও আশাশুনিতে বিকল্প কোন কর্ম সংস্থানের সুযোগ না থাকায় সুষ্টি হচ্ছে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার।