তিন যুগেও হিলি স্থলবন্দরে নির্মাণ হয়নি ট্রাক টার্মিনাল, যানজটে নাকাল পৌরবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক
গোলাম রব্বানী, উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: শুক্রবার ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৪:২৯ অপরাহ্ন
তিন যুগেও হিলি স্থলবন্দরে নির্মাণ হয়নি ট্রাক টার্মিনাল, যানজটে নাকাল পৌরবাসী

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর। ভৌগলিক অবস্থান এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে এই পথটা ব্যবসায়ীদের জন্য সুবিধাজনক বলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমদানি রফতানি কারকরা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি রফতানি করছেন। ফলে প্রতিবছর সরকার এই বন্দর দিয়ে কয়েক শো কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে। তারপরও এই বন্দর প্রতিষ্ঠার তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও বন্দরে নেই কোনো স্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল। প্রতিশ্রুতি মিললেও আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যার কারণে প্রতিনিয়ত বন্দরের মেইন সড়কে লেগে থাকে যানজট। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় স্কুল কলেজ এর ছাত্র ছাত্রী, বাইক চালক, পথচারী থেকে শুরু করে ট্রাক-বাস চালকদের।


জনাগেছে, ১৯৮৬ সালে হিলি স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালে বেসরকারি সংস্থা পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড ২৫ বছরের লিজ সরকারের নিকট থেকে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো এই  বন্দর এলাকায় নির্মাণ করা হয়নি স্হায়ী ট্রাক টার্মিনাল। প্রতিদিন ভারত থেকে পণ্যবাহি ট্রাক এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পণ্য সরবরাহের জন্য কয়েক’শ ট্রাক এই বন্দরে আসে। স্থায়ী টার্মিনাল না থাকায় ট্রাকগুলোকে রাস্তার ওপর এলোপাতাড়ি করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বন্দরের সড়কগুলো সংকীর্ণ হওয়ার কারণে প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। তাই দ্রুত স্থলবন্দর এলাকায় দ্রুত ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 


জুয়েল, সাবরিনা ও শাকিলা নামের স্কুল শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, হিলি স্থলবন্দরের বেহাল অবস্থা তার ওপর আবার প্রতিদিন যানজট তো আছেই। বিশেষ করে স্কুলে যাওয়ার সময় এবং স্কুল ছুটির পর বাড়িতে যাওয়ার সময় প্রায় দিন যানযটের মধ্যে পড়তে হয়। এখানকার সড়কগুলো খুবই সংকীর্ণ। প্রতিনিয়তই এই সড়কে যানজট লেগেই থাকে। আমরা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই! 


কয়েক জন ভ্যান-রিকশা চালক বলেন, হিলিতে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। প্রচুর গাড়ি যাওয়া আসার কারণে যানজট লাগে। আমরা যাত্রী নিয়ে সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি না। যদি হিলিতে ট্রাক টার্মিনাল থাকতো তাহলে অনেক ভালো হতো।


পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকচালক সন্তোষ চন্দ্র বলেন, পেঁয়াজ লোড দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। কিন্তু হিলির রাস্তায় যে যানজট তাতে হিলি শহর থেকে বের হতে অনেক সময় লেগে যাবে। রাস্তার দুই পাশেই খালি ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার জন্য যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।


হিলি টু বগুড়া বাসচালক রকি মিয়া ও রাজু আহম্মেদ বলেন, আমাদের তো টাইমের গাড়ি, সময় মতো বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছাতে হয়। দুঃখের বিষয় হলো বগুড়া থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত আসতে যে সময় লাগে ঘোড়াঘাট থেকে হিলি মাত্র ২৫-২৮ কিঃ মিঃ রাস্তায় ওই সময় লাগে। তার মধ্যে হিলি বন্দর রাস্তায় যদি একবার যানযট লাগে এক, দেড় ঘন্টা সময় লাগে যানযট নিরসন করতে। হিলির রাস্তা-ঘাট গুলো এমনিতেই ছোট তার ওপর অনেক ট্রাক রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। যারফলে অল্পতেই যানযট সৃষ্টি হয়। আর প্রায় প্রতিদিন অতিরিক্ত যানজটের কারণে নাকাল হিলি পৌরবাসী। 


বাংলাহিলি সি এন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, একটি স্থায়ী ট্রাক টার্মিনাল হিলিবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। গত আগষ্ট মাসে হিলিতে নৌ মন্ত্রণালয়ের নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসেছিলেন। আলোচনা সাপেক্ষে দ্রুত সময়ে হিলি স্থলবন্দর এলাকায় একটি স্হায়ী ট্রাক  টার্মিনাল নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ এর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আমি ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। আশা করছি অচিরেই টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে।


হিলি পানামা পোর্ট লিঙ্কের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাপ মল্লিক বলেন, আমাদের এই বন্দরে ট্রাক টার্মিনাল নেই। ফলে পণ্যবাহী ট্রাকের মালামাল আনলোড করে খালি ট্রাকে লোড করতে প্রচুর সময় লাগে। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। টার্মিনাল থাকলে দ্রুত সময়ে মধ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য সরবরাহ সম্ভব হতো। আমরা ইতোমধ্যে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়র এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যাটি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।