রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন, দুর্ঘটনা না নাশকতা?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ইনিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৪৭ অপরাহ্ন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন, দুর্ঘটনা না নাশকতা?

উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারও আগুনে ৩০টি বসতঘর এবং ১৫টি দোকান ভস্মীভূত হয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহত নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে এটা চতুর্থ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ঘনঘন আগুনের ঘটনা দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত নাশকতা, তা তদন্তের দাবি জানিয়েছে সচেতন মহল।


শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উখিয়া উপজেলার টিভি টাওয়ারসংলগ্ন কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফুল ইসলাম।



শরীফুল বলেন, শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টায় কক্সবাজার-টেকনাফ লাগোয়া উখিয়া উপজেলার টিভি টাওয়ারসংলগ্ন কুতুপালং ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি স্থাপনায় আকস্মিক আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে আগুন আশপাশের বসতঘর ও দোকানপাটে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে খবর দেওয়া হয়।


কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, আগুন লাগার খবরে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এ ছাড়াও কক্সবাজার ও রামু থেকে ফায়ার সার্ভিসের আরও দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেয়। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আগুন লাগার ঘটনায় অন্তত ৩০টি বসতঘর ও ১৫টি দোকান পুড়ে গেছে।


তিনি বলেন, 'আগুনের সূত্রপাতের কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ চলছে।’


সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, এটি বছরের চতুর্থ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এর আগে ১৭ জানুয়ারি রাত ২টায় উখিয়ার মধুরছড়ায় বি-ব্লকের আগুনে ৩০টি ঘর পুড়ে গেছে। গভীর রাতে কোনো রোহিঙ্গা ঘরে আগুন না জ্বালানোর পরও কীভাবে এই আগুনের ঘটনা ঘটেছে, কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি এখনো।


গত ৯ জানুয়ারি উখিয়ার শফি উল্লাহ কাটা ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও প্রায় ১ হাজার ২০০ ঘর পুড়ে যায়। তার আগে ২ জানুয়ারি উখিয়ার বালুখালী ২০ নম্বর ক্যাম্পে জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত করোনা হাসপাতালে আগুন লাগে। ওই আগুনেও কেউ হতাহত হয়নি। তবে হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারের ১৬টি কেবিন পুড়ে যায়।


এর-ও আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীতে ক্যাম্পে লাগা আগুনে মৃত্যু হয় ১৫ রোহিঙ্গার। পুড়ে যায় ১০ হাজারের মতো ঘর।


উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রহস্যজনকভাবে ঘনঘন আগুনের ঘটনাটি দুর্ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এটি পরিকল্পিত নাশকতা বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে এনজিওগুলোর নতুন ঘর তৈরির নামে বরাদ্দ বাড়তে এই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না, তা তদন্ত করা জরুরি।


নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন-এর ১৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হক জানান, অগ্নিকাণ্ডের পেছনে দুষ্কৃতকারীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।