সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলে ফেরীঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাখাওয়াত জামিল সৈকত (অতিথি লেখক)
প্রকাশিত: বুধবার ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:০৪ পূর্বাহ্ন
সন্ধ্যা নদীর ভাঙন কবলে ফেরীঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা

বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্ররূপ ধারণ করেছে। গত  দু’ দিনে উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের শিয়ালকাঠি ফেরীঘাটসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা নদী গ্রাস করে ফেলেছে। বানারীপাড়ায় গত কয়েকদিন ধরে বৈরী আবহাওয়া ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। বেপরোয়া বালু উত্তোলন, টানা বর্ষণ ও নদীতে জোয়ারের পানির অস্বাভাবিকতার কারনে নদী ভাঙনে রুদ্ররূপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন  নদী গিলে ফেলছে নতুন নতুন এলাকা। 


ভাঙনের ধারাবাহিকতায় ১৩ সেপ্টেম্বর  সোমবার উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের শিয়ালকাঠি ফেরীঘাট সংলগ্ন এলাকার বেশ কিছু অংশ নদী গ্রাস করে ফেলে। ওই এলাকার মন্টু বেপারী , হানিফ মোল্লা, রাজিব মোল্লা  ও  রহমান বেপারীর দোকান এবং  শিশির কর্মকার  ও সহাদেব কর্মকারের বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ওই স্থানে ভাঙনের মুখে রয়েছে বেশ কয়েকটি  ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (দোকানঘর).মসজিদ ও বসতবাড়ি। ফেরীঘাটে ভাঙনের ফলে গ্যাংওয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে ফেরী চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ট্রলারে নদী পারাপারে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নদীর পশ্চিম পাড়ের বাইশারীসহ ৫ ইউনিয়নের মানুষের অন্তহীন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 


ভাঙনের তীব্রতায় ছোট হয়ে আসছে নদীর পশ্চিম জনপদের মানচিত্র। ইতোমধ্যে উপজেলার বানারীপাড়া সদর ,বাইশারী, সৈয়দকাঠি,সলিয়াবাকপুর, ইলুহার ও চাখার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের  শত শত পরিবার রাক্ষসি সন্ধ্যা নদীর ভয়াল থাবায় বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব  ও রিক্ত হয়ে পড়েছে। ওইসব গ্রামের রাস্তাঘাট,ব্রিজ-কালভার্ট,স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা,বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় মানচিত্রে থাকলেও বাস্তবে ওই গ্রামগুলোর অস্তিত্ব নেই। মাথা গোঁজার ঠাই টুকু হারিয়ে বহু পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। বসতভিটাসহ সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত এসব মানুষের  চোখে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। 


উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের উত্তর নাজিরপুর আবাসন হুমকির মুখে রয়েছে। ইলুহার বিহারী লাল একাডেমি ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেকোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। স্কুল দুটি রক্ষায় সম্প্রতি শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালণ করেছে। শিক্ষার্থীরা স্কুল দুটি রক্ষায় সরকারি কোন পদক্ষেপ না থাকায় ব্যাক্তি উদ্যোগে  ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলার জন্য দানবাক্স হাতে হাটবাজারসহ মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে। 


এদিকে স্থানীয়  সংসদ সদস্য মোঃ শাহে আলমের উদ্যোগে নদীর ভাঙন রোধে উজিরপুর উপজেলার লস্করপুর লঞ্চ টার্মিনাল সংলগ্ন রাস্তা বাঁচাতে ১২ সেপ্টেম্বর রবিবার ৪ হাজার ৪৬টি ও ১৩ সেপ্টেম্বর বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নের চাউলাকাঠি গ্রামে ৮ হাজার ৬শ ৬৬টি এবং বাইশারী ইউনিয়নের শিয়ালকাঠি গ্রামে  ৮ হাজার ৬শ ৬৬টি জিওব্যাগ ফেলা হয়। 


এর আগেও শিয়ালকাঠি ফেরীঘাট এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। কিন্তু ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। অপরদিকে ভাঙন রোধে স্থায়ী কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।