নওগাঁর যে সড়কে ধূলো আর কাদাপানিতে চরম ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বুধবার ৩০শে জুন ২০২১ ০১:০৯ অপরাহ্ন
নওগাঁর যে সড়কে ধূলো আর কাদাপানিতে চরম ভোগান্তি

নওগাঁর জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক রাণীনগর-আবাদপুকুর-কালীগঞ্জ সড়কের কাজ নির্ধারিত সময়ের ১ বছর পার হলেও মেরামত ও সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। পুরো সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্তের। খরা মৌসুমে ধুলোবালি ও বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে এলাকাবাসির ভোগান্তি চরমে উঠে। এই সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। 





ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে এবং শীঘ্রই নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে সড়ক সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করা হবে বলছে, স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ।




নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার গোল চত্তর থেকে আবাদপুকুর হয়ে কালীগঞ্জ সড়কের দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার। উপজেলার ৮০ শতাংশ মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। সংস্কার কজের জন্য উপরিভাগ তুলে ফেলায় চলার অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কটি। 






নওগাঁর রানীনগর, আত্রাই, বগুড়ার আদমদীঘি, নন্দীগ্রাম এবং নাটোরের সিংড়া উপজেলার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে নিজ নিজ উপজেলা সদর এবং নওগাঁ জেলা সদরে যাতায়াত করেন। রবীন্দ্র কুঠিবাড়ী পতিসর এবং আবাদপুকুর হাটে যাতায়াতেরও মাধ্যম এটি। 




বছরের পর বছর সড়কটি সংস্কার না করায় সড়কটিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়।




এমতাবস্তায় নওগাঁ সওজ থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারীর শুরুতে দরপত্রের মাধ্যমে পৃথক দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ এবং ৪টি সেতু ও ২৩টি কালভার্ট নির্মাণ ও সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা হয়। কাজ দুটি শেষ করার মেয়াদ ছিল গত বছরের (২০২০) এপ্রিল মাসে। অথচ নির্ধারিত সময়ের ১ বছর পার হলেও মীর হাবিবুল আলম কন্সট্রাকশনের ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণ কাজের কিছুটা অগ্রগতি করেছে। 







অপরদিকে এসপ্কেট্রা ওয়াহেদ কন্সট্রাকশনের সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ কাজের কোন অগ্রগতি নেই। মাসের পর মাস কাজ বন্ধ রেখে ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে যানবাহন অকেজোসহ যানবাহনের অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে। 





এদিকে এ জনপদের লাখ লাখ মানুষকে প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সিমাহীন দূর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ ) সঠিক নজরদারি ও ঠিকাদারের অবহেলায় আড়াই বছর থেকে রাণীনগর থেকে কালীগঞ্জ সড়কের এই বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।





রাণীনগর উপজেলার কালীগ্রাম এর বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম বলেন, প্রয়োজনীয় কাজে মাঝে মাঝে রাণীনগর উপজেলায় যেতে হয়। কিন্তু রাস্তার যে অবস্থা তাতে করে খরা মৌসুমে ধুলোবালি ও বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সিএনজি বা অটোর্চাজারে যাতায়াত করতে দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। জনগনের টাকা দিয়ে জনগনের চলাচলের রাস্তার সংস্কার কাজ কেন এতদিনে হচ্ছেনা। 




স্থানীয় বেলঘড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল হোসেন যাচ্ছেন সিএনজি করে রাণীনগর উপজেলা সদরে এসময় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, মানুষকে এভাবে আড়াই বছর ধরে কষ্টে রাখার মানেটা কি। ২০১৯ সালে রাস্তার সংস্কারের নামে ২২কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং তুলে ফেলে পরে আর রাস্তার কোন কাজ করা হচ্ছেনা। 





এই রাস্তায় বিশেষ করে রোগি ও শিশুদের যাতাযাতে খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়। রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য এখন পর্যন্ত কৃর্তপক্ষের কোন উদ্যোগই দেখছিনা। আমাদের মত সাধারন মানুষের দুঃখ বোঝার মত কৃর্তপক্ষের কোন উপলব্ধিবোধ মনে হয় নেই।





রাণীনগর উপজেলার বড়বড়িয়া গ্রামের আশিক হোসেন জানান, প্রয়োজনীয় কাজে প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। অবাক লাগে প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেছে রাস্তার কার্পেটিং উলটিয়ে রাখছে কিন্তু  রাস্তা মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। রাস্তাটি নিয়ে মনে হয় কারো কোন মাথা ব্যথাই নেই। যত হয়রানি আমাদের মত পথচারিদের।





স্থানীয় রাণীনগর উপজেলার সিএনজি চালক  আবেদ আলী জানান, রানীনগর থেকে আবাদপকুর হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত এই রাস্তায় মূলত ট্রাক, সিএনজি অটোচার্জার, সিএনজি, ভ্যান ও মোটর সাইকেল চলাচল করে। 




রাস্তায় বেহাল দশার কারনে প্রতিনিদই আমাদের গাড়ির নানা যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই ২০১৯সালে রাস্তার উন্নয়ন কাজ শুরু হয় কিন্তু আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজের অগ্রগতি নাই।




স্থানীয় আবাদপুকুর বাজারের অটোর্চাজার চালক, বেলাল হোসেন জানান, প্রতিদিন আমি রানীনগর ও কালীগঞ্জ বাজারে ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে যাওয়া-আসা করি। মাঝেই মাঝেই আমার গাড়িড় চাকা ও মার্টঘার্ট নষ্ট হয়ে যায়। যার কারনে লসে পড়তে হয়। কবে যে এই রাস্তার কাজ শেষ হবে । এতদিন ধরে রাস্তার কাজ শেষ হচ্ছেনা। কারোই যেন কোন মাথা ব্যথা নাই।





ট্রাক চালক সোহেল রানা জানান, ট্রাকে করে ধানসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-যাওয়া করতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাস্তায় চাকা ডেবে যায়। মাঝে মাঝেই ট্রাকের নানা যক্রাংশ বিকল হয়ে যায়। জানিনা রাস্তার কাজ কবে শেষ হবে।




ঠিকাদারের গাফলিতেই কারনেই সড়ক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়নি। সড়ক সংস্কারকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চুড়ান্ত নোটিশ দেয়ার পর কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক তাদের জরিমানা আরোপ করা হবে। 





নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজটি সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নওগাঁর নিবার্হী প্রকৌশলী মোঃ সাজেদুর রহমান জানান, বিভাগীয় নিয়ম যথারীতি অনুসরণ করে অবশিষ্ট ৪৮ কোটি টাকার কাজের ওপর ১০ শতাংশ হিসেবে ঠিকাদারের কাছ থেকে প্রায় চার কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পুনরায় কাজের নির্মাণ ব্যয় যাচাই শেষে নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। 





তিনি আরো বলেন, খুব শিগগিরই রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু হবে। এছাড়া ৪টি সেতু ও ২৩টি কালভার্ট নির্মাণ কাজ চলমান আছে দ্রুতই কাজগুলো সংম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। ২২ কিলোমিটার রাস্তাটি প্রশস্তকরণ, সেতু নির্মাণ ও সড়ক সংস্কারের কাজে প্রায় একশত কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।