মায়ের কোলে বসে শুনেছিলাম পৃথিবীর স্রষ্টা একজনই; ধর্মযাজক গ্যাব্রিয়েল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: রবিবার ৬ই অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫৪ অপরাহ্ন
মায়ের কোলে বসে শুনেছিলাম পৃথিবীর স্রষ্টা একজনই; ধর্মযাজক গ্যাব্রিয়েল

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্যামুয়েল ছিলেন একজন খ্রিস্ট ধর্মযাজক। বিশেষ কাজে কিছুদিনের জন্য সৌদি আরবের জেদ্দায় আসেন। দেশটিতে অবস্থানকালে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর কল্পনার জগতের মুসলিম আর জেদ্দার মুসলিমদের মাঝে বিস্তর ফারাক। পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়ায় মুসলিমদের যেমন গোঁড়া, উগ্র ও হিংস্ররূপে উপস্থাপন করা হয়, ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়। তখন থেকেই ইসলামের পথে তাঁর যাত্রা শুরু। একসময় তিনি কালিমা পড়ে মুসলিম হয়ে যান। আরবি গণমাধ্যম সাবক ডট অর্গে প্রকাশিত তাঁর আত্মকথা বাংলায় ভাষান্তর করেছেন বেলায়েত হুসাইন

আমি গ্যাব্রিয়েল, কখনোই ভাবিনি সৌদি আরবে এসে আমার জীবনের মোড় ঘুরে যাবে। আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন আসবে। জেদ্দায় কাটানো দিনগুলো এভাবে আমাকে অন্ধকার থেকে ঈমানের আলোয় আলোকিত করবে, তা ছিল আমার কল্পনাতীত। বাস্তবতা হলো, সৌদি আরবের মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবন ও পারস্পরিক আচার-ব্যবহার আমাকে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছে। অমুসলিম হওয়ায় সৌদি আরবে যাওয়ার পর কিছুটা নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছিলাম। ভাবছিলাম, মুসলিমদের সঙ্গে কিভাবে চলাফেরা ও ওঠাবসা করব। বিশেষত পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রচারিত মুসলমানের চিত্র আমাকে ভয় পাইয়ে দেয়। সৌদি আরবের সমাজব্যবস্থার ব্যাপারে ভয়ংকর অনেক কথা শুনেছিলাম, কিন্তু জেদ্দায় আসার পর আমার কল্পনার ভুলগুলো ভাঙতে শুরু করে। আগে থেকে জানা অনেক তথ্য ভুল প্রমাণিত হয়। এ সময় আমি ইংরেজিতে অনূদিত কিছু ইসলামী বই ও ম্যাগাজিন পড়তে শুরু করি।

আলহামদুলিল্লাহ! একসময় মহান আল্লাহ আমার অন্তরে হেদায়াতের আলো দান করেন। আমি ইসলাম গ্রহণ করি। ইসলাম গ্রহণের পর নতুন করে কোরআনুল কারিমের ইংরেজি অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ আগের অনুবাদগুলোর ভাষা ছিল প্রাচীন। আমি আধুনিক ইংরেজিতে আবারও ভাষান্তর করতে চাইলাম। জেদ্দা অবস্থানের সময় সৌদি আরবের সামাজিক অবস্থাকে কোরআন অনুগামী মনে হয়। ফলে আমিও তাদের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।

স্থানীয় মুসলমানদের অসাধারণ অতিথিপরায়ণতা ও অন্যের প্রতি সম্মানবোধ আমাকে মুগ্ধ করে। আমি অমুসলিম হওয়ার পরও আমার সঙ্গে তাদের আচার-আচরণ ছিল প্রশংসাযোগ্য। তাদের আচার-আচরণ আমার মনে সৌদি আরব ও ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুরাগ তৈরি করে। এ ছাড়া শৈশবে মায়ের কাছে শুনেছিলাম, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। মুসলিমরা এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। তাদের চরিত্রও উত্তম। আমার মনে হয়, আমার মায়ের এসব কথা আমার অন্তরে গেঁথে ছিল। তবে পারিপার্শ্বিকতা আমাকে এদিকে আগাতে দেয়নি, বরং উল্টো পথে নিয়ে গেছে। জেদ্দায় এসে যখন মায়ের কথার সত্যতা খুঁজে পাই, তখন মহান স্রষ্টার প্রতি প্রচণ্ড আকর্ষণ তৈরি হয়।

তার পরও ইসলাম সম্পর্কে আমার পড়ালেখা ও গবেষণা অব্যাহত রাখি। ইসলামের উদার ও ইনসাফপূর্ণ জীবন আমার সামনে স্পষ্ট হয়। এর পরই ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করি। আমি সৌদি আরবের মুসলিমদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ আমার ইসলাম গ্রহণে তারাই ছিল মূল প্রভাবক।

ইনিউজ৭১/জিয়া