মোদিকে পুরস্কার দিচ্ছে গেটস ফাউন্ডেশন, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২০ অপরাহ্ন
মোদিকে পুরস্কার দিচ্ছে গেটস ফাউন্ডেশন, বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড়

চলতি মাসের শেষে ভারতের বিতর্কিত হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সম্মানজনক পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। এতে মানবাধিকারকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী ও আইনজীবীদের কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। ব্রিটেনের বিখ্যাত দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক ‘স্বচ্ছ ভারত কর্মসূচির’ জন্য দ্য গ্লোবাল গোলকিপার পুরস্কার দিতে নরেন্দ্র মোদিকে মনোনীত করা হয়েছে। অধিকৃত কাশ্মীর ও আসামের মুসলমানদের নাগরিকত্ব হরণ, আটক ও বিতাড়নের মধ্যেই এ পুরস্কারের জন্য তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য দুটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রধান খবরে পরিণত হয়েছে। মোদির ঝুলিতে আন্তর্জাতিক মর্যাদাকর পুরস্কারের মধ্যে নতুন সংযোজন হতে যাচ্ছে গ্লোবাল গোলকিপার পুরস্কার।

স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা দক্ষিণ এশীয় আমেরিকানদের একটি গ্রুপ এক খোলা চিঠিতে দ্য গেটস ফাউন্ডেশনকে বলেছে, নরেন্দ্র মোদি তার সম্প্রদায়ের কয়েক লাখ লোককে কার্যত আটকে রেখেছেন। কাজেই তাকে যাতে এ পুরস্কার না দেয়া হয়, সেই অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। চিঠিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে মোদি জম্মু ও কাশ্মীরের ৮০ লাখ লোককে মূলত গৃহবন্দি করে রেখেছেন। তাদের টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন এবং বৈশ্বিক গণমাধ্যমে যাতে খবর প্রচারিত না হয়, সে জন্য অচলাবস্থা আরোপ করে রেখেছেন। ‘শিশুসহ হাজার হাজার লোককে কারাবন্দি করে তাদের মৌলিক অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। কাশ্মীরি শিশুদের হত্যা ও নির্যাতনসহ মারাত্মক নিপীড়ন চালাচ্ছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী,’ চিঠিতে দাবি করা হয়।

স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, ভারতীয় সরকারের উদ্ধত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মুখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নীরব থাকতে ও এড়িয়ে চলতে চায় বলেই এ পুরস্কার আভাস দিচ্ছে। গবেষণা ও সাংবাদিকতাবিষয়ক পোর্টাল পলিস প্রজেক্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও আইনজীবী সুচিত্রা বিজয়া বলেন, মোদির গণতন্ত্রকে ধ্বংস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকে স্বাভাবিকীকরণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় ভূমিকার জন্য ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারতেন না মোদি। রাজ্যটিতে যখন কয়েক হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে, মোদি তখন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।

সুচিত্রা বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। বিনিয়োগের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জায়গা ভারত ও ভারত আলো ছড়াচ্ছে বলে যেসব ভাষ্য প্রচলিত আছে, এসব কিছু তখনই হিসাবে নেয়া হবে, যখন বিশ্বসম্প্রদায় তার স্বীকৃতি দেবে। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন সরকার ও সংস্থা মোদিকে সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত করে আসছে। গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নতুন জীবন দেয়ায় ভারতের এই হিন্দুত্ববাদী নেতাকে ফিলিপ কটলার প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ধনী ও দারিদ্র্যের মধ্যে ব্যবধান কমাতে অবদান রাখায় তিনি সিউল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।

বাজার থেকে মুদ্রা তুলে নেয়াসহ তার অর্থনৈতিক নীতি বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হলেও তাকে এসব পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। গত বছর মোদিকে চ্যাম্পিয়ন অব আর্থ পুরস্কার দিয়েছে জাতিসংঘ। যদিও তার সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে ভারতে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ার হুমকিতে পড়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের একটি হচ্ছে দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লি। বিবৃতিতে গেটস ফাউন্ডেশন বলছে, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় মোদিকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব