পাল্টা জবাব হিসেবে এবার নিজেদের বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দিয়েছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার কাসুর এলাকায় সুলতেজ নদীর ওপর বাঁধগুলো খুলে দেন পাক কর্মকর্তারা। এতে ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলায় ইতিমধ্যে অন্তত ১৭ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতে একই এলাকার আরও কয়েকটি গ্রাম আগেই ডুবে গিয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর চলতি সপ্তাহে ভারত হঠাৎ করে উজানে বাঁধ খুলে দেয়ায় সুতলেজ নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। পানি ছেড়ে দিয়ে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করেছে বলে দাবি করছে দেশটি। এটাকে ‘পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ’ বলেও অভিহিত করে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারত। এরপর থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। সেই সঙ্গে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে নেমেছে। তারই মধ্যে বাঁধ খুলে দিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টির অভিযোগ তোলে পাকিস্তান। তারা জানায়, পূর্ব কোনো সতর্কতা ছাড়াই বাঁধ খুলে সুতলেজ নদীতে অন্তত ২ লাখ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোজাম্মিল হুসেইন রয়টার্সকে বলেন, ভারত এখন পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধ শুরু করেছে।
তারা পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে একঘরে করার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের অর্থনীতিকেও চেপে ধরতে চাইছে ভারত। হুসেইন আরও বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এর আগেই পাকিস্তানে পানি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। তিনি এ সংক্রান্ত চুক্তিগুলোকে অমান্য করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন হুসেইন।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের কৃষি কাজের ৮০ শতাংশই নির্ভর করে ভারতের পানির ওপর। তবে ভারত সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্ষ মৌসুমে এটি নিয়মিত কাজের অংশ। আর পানি ছাড়ার ব্যাপারটি দুই দেশের চুক্তি মোতাবেকই হচ্ছে। নয়াদিল্লির এ অবস্থানের দু’দিন পরই পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পাঞ্জাবের কাসুর জেলায় সুতলেজ নদীর উজানে নিজেদের বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দেয় পাকিস্তান। ভারতের এক কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, ‘গেট খুলে দেয়ায় আমাদের অংশ অন্তত ১৭টি গ্রাম ডুবে গেছে। ওই কর্মকর্তা জানান, কাসুর থেকে ট্যানারির বর্জ্যমিশ্রিত পানি আসছে। সেই পানি নদীতে এসে মিসছে।’
পাকিস্তানকে আন্তঃনদীর পানি সম্পর্কিত তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিল ভারত। এখন থেকে পানি বৃদ্ধির তথ্য ও বন্যার আগাম বার্তা এখন থেকে আর প্রদান করবে না নয়াদিল্লি। কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই ইসলামাবাদের সঙ্গে ১৯৮৯ সালে স্বাক্ষরিত ‘হাইড্রোলজিক্যাল ডাটা’ আদান-প্রদান করার চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিল ভারত। বুধবার একথা জানিয়েছেন ‘ইন্দাস ওয়াটার’-এর ভারতের কমিশনার পিকে সাক্সেনা। চুক্তি অনুযায়ী, নদীতে পানি বৃদ্ধির যাবতীয় তথ্য পাকিস্তানকে জানিয়ে দিত ভারত। এর ফলে আসন্ন বন্য পরিস্থিতি সামাল দিতে আগাম প্রস্তুতি নিতে পারত পাকিস্তান। বন্যায় কৃষি বা জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা ভারতের থেকে পাওয়া ‘হাইড্রোলজিক্যাল ডেটা’র ভিত্তিতে অনেকটাই সামাল দেয়া সম্ভব হত। এখন থেকে সেটা আর সম্ভব হবে না।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।