জম্মু-কাশ্মীরের জনসংখ্যা মাত্র এক কোটি ২০ লাখ। গ্রাম-পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত এক লাখ এক হাজার ৩৮৭ বর্গকিমি. উপত্যকার প্রতি ইঞ্চি মাটিতে সেনা-পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে। ‘শান্তিরক্ষা’র নামে মোতায়েন করা হয়েছে নয় লাখ ৫০ হাজার সেনা-পুলিশ। অর্থাৎ প্রতি ১২ জনের জন্য একজন করে নিরাপত্তারক্ষী। ভারতীয় বিমানবাহিনীর পাশাপাশি প্রধানত সেনাবাহিনী, আধাসামরিক ও বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে কয়েকশ’ মাইল দূরে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ১০ লাখ সদস্যদের বেশিরভাগই আগে থেকে মোতায়েন ছিল। চলতি মাসের প্রথম দিকে উপত্যকার স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা বাতিলের এক সপ্তাহ আগে থেকে ধাপে ধাপে আরও এক লাখ ৭৫ হাজার সদস্য নিয়ে যাওয়া হয়।
একসঙ্গে এত সেনা উপত্যকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। কাশ্মীর বিভাজনের ১৫ দিন পরেও ভারি অস্ত্র হাতে কাশ্মীরিদের ওপর নজর রাখছে সেনারা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে তারকাঁটা আর ব্যারিকেড বসিয়ে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় কারফিউ শিথিল করা হলেও গত দুই দিনে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের মুখে ফের কড়াকড়ি আরোপ করেছে। সোমবার ডেকান ক্রনিকেলের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদন মতে, বিশালসংখ্যক এই সেনা-পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে পুরো জম্মু-কাশ্মীরই এখন কার্যত সেনা ব্যারাকে পরিণত হয়েছে। লাখ লাখ সেনার জরুরি চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত ১০০ জন ডাক্তার পাঠানো হয়েছে।
ওষুধ-পথ্য ও অন্যান্য রসদের মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে। বিশাল এই মজুদ দিয়ে অন্তত তিন-চার মাস চলতে পারবে নিরাপত্তা বাহিনী। সেনাদের আনা-নেয়ার জন্য অতিরিক্ত কয়েকশ’ সেনাযান সরবরাহ করা হয়েছে। গাড়িগুলো মূলত মুসলিম প্রধান দক্ষিণ কাশ্মীরে মোতায়েন করা হয়েছে। অফিস-আদালত ও দোনানপাট বন্ধ। এখনও কার্যত চার-দেয়ালের মধ্যে বন্দি কাশ্মীরিরা। শনিবার কারফিউ কিছুটা শিথিল করার পর কোথাও কোথাও বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নতুন করে মোতায়েন সেনা সংখ্যার দিক দিয়ে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) বা আধা সামরিক বাহিনীই সবচেয়ে বেশি। উপত্যকাজুড়ে সিআরপিএফের অন্তত ১০০টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। প্রত্যেক ব্যাটালিয়নে রয়েছে এক হাজার করে সদস্য। এর সঙ্গে চলতি মাসের শুরুতে ‘অমরনাথ তীর্থযাত্রা’র আগে আগে আরও ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। তাদের দাবি, কাশ্মীরিদের সন্ত্রাসী হামলা থেকে বাঁচাতে এসব নিরাপত্তা বাহিনী মাঠে রয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা এটাকে ‘অনেকটা যুদ্ধ প্রস্তুতি’ বলে বর্ণনা করছেন। রাস্তায় রাস্তায় সেনা-পুলিশে সয়লাব। উপত্যকার প্রতি আনাচে-কানাচে অবিরাম টহল দিচ্ছে তারা। চলছে ভোর থেকে ভোর পর্যন্ত। রাত নামলেই আরও সতর্ক হয়ে যায় জওয়ানরা।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।