প্রকাশ: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:২১
রসায়নবিজ্ঞানে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা ঘটিয়ে এ বছর নোবেল পুরস্কার জিতেছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমার এম ইয়াগি। তারা যৌথভাবে পুরস্কার পেয়েছেন এক যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য, যার নাম ‘মেটাল অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস’ বা এমওএফ। এই আবিষ্কার রসায়নের জগতে খুলে দিয়েছে নতুন এক সম্ভাবনার দরজা।
সুইডিশ রয়্যাল অ্যাকাডেমি জানিয়েছে, এই তিন বিজ্ঞানীর তৈরি বিশেষ কাঠামো এমনভাবে নির্মিত যেখানে গ্যাস এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ সহজে চলাচল করতে পারে। তাদের তৈরি এই আণবিক কাঠামো শুধু বৈজ্ঞানিক কৌতূহল নয়, বাস্তব জীবনের নানা সমস্যার সমাধানেও ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
‘মেটাল অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস’ এমন একধরনের স্ফটিক, যার ভেতরে অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্র রয়েছে। এই ছিদ্রগুলোর মাধ্যমে নির্দিষ্ট গ্যাস বা তরল পদার্থ সংরক্ষণ ও পৃথক করা যায়। মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ কিংবা কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস ধরে রাখার মতো কাজেও এই কাঠামো ব্যবহার করা সম্ভব।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এমওএফ কাঠামোর ধাতব আয়নগুলো কোণার স্তম্ভের মতো কাজ করে, আর সেই স্তম্ভগুলোকে সংযুক্ত রাখে দীর্ঘ জৈব অণু। এভাবে তৈরি স্ফটিকের ভেতরে তৈরি হয় বহু গহ্বর, যা পদার্থ পরিবহণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এই ছিদ্রযুক্ত উপাদানগুলো রসায়নে নতুন দিক উন্মোচন করেছে।
এই কাঠামোর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর নমনীয়তা। বিজ্ঞানীরা চাইলে খুব সহজেই কাঠামোর উপাদান পরিবর্তন করতে পারেন, ফলে বিভিন্ন কাজে এটি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা যায়। নির্দিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ পরিবহণ—সব ক্ষেত্রেই এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
রসায়নের এই সাফল্যকে বিজ্ঞানীরা বলছেন ভবিষ্যতের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির চাবিকাঠি। বিশেষ করে দূষণ নিয়ন্ত্রণ, গ্যাস সংরক্ষণ এবং বিকল্প জ্বালানি উন্নয়নে এমওএফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে, নোবেল কমিটি জানিয়েছে ১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১৬ বার রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই পুরস্কার বিজ্ঞান জগতে সর্বোচ্চ সম্মান হিসেবে বিবেচিত। অতীতে অনেক মহান বিজ্ঞানী এই স্বীকৃতি পেয়েছেন, যাদের আবিষ্কার মানবজীবনে বিপ্লব এনেছে।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামানুসারে এই পুরস্কার চালু হয় ১৯০১ সালে। বিস্ফোরক ডিনামাইটের আবিষ্কারক নোবেল মৃত্যুর আগে উইল করে গিয়েছিলেন, যেন প্রতি বছর বিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরের রসায়ন পুরস্কার প্রমাণ করল—মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান আজও অপরিসীম।