প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৫০
নেপালের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারানোর জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) জেন-জির বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন অলি। পদত্যাগের পর গুঞ্জন ওঠে তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তবে তিনি বর্তমানে নেপালেই অবস্থান করছেন এবং সেনাবাহিনীর শিবপুরি ব্যারাকে আছেন।
অলি বুধবার নিজ দলের মহাসচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, যদি তিনি লিপুলেখ অঞ্চল নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন না এবং অযোধ্যা ও দেবতা রামের জন্মস্থান নিয়ে বিতর্কে না অংশ নিতেন, তাহলে তিনি হয়ত ক্ষমতায় থাকতেন। তিনি বলেন, ভারতের বিরোধিতার কারণে তার ক্ষমতা হারানো হয়েছে।
লিপুলেখ গিরিপথকে কেন্দ্র করে ভারতের সঙ্গে নেপালের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। কালাপানি অঞ্চলের মাধ্যমে সীমান্ত নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮১৬ সালের সুগৌলি চুক্তি অনুযায়ী। নেপাল দাবি করে, কালী নদীর উৎপত্তি লিম্পিয়াধুড়া থেকে, যা লিপুলেখের উত্তরে। এর ভিত্তিতে কালাপানি ও লিপুলেখ নেপালের ভূখণ্ড। অন্যদিকে, ভারত দাবি করে নদীটি কালাপানি গ্রামের কাছে শুরু হয় এবং ওই অঞ্চল তাদের উত্তরাখণ্ডের অংশ।
অলি সরকার লিপুলেখ ও কালাপানি নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল। নেপাল ভারতকে ওই অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছিল। এছাড়া চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কেও নেপাল বিষয়টি জানিয়েছিল। তবে ভারত নেপালের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে কেপি শর্মা অলি অযোধ্যা ও দেবতা রামের জন্মস্থান নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন, রাম নেপালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, ভারতে নয়। এছাড়া রামের সীতার সঙ্গে বিয়ে ও প্রাচীন যুগে দূরের স্থানে বিয়ের প্রথা সম্পর্কে মন্তব্য করে ভারতীয় সমালোচনার মুখে পড়েন।
অলি বলেছিলেন, প্রাচীন সময়ে দূরের স্থানে বিয়ের প্রচলন ছিল না। রাম কীভাবে ভারতের অযোধ্যা থেকে নেপালের জনকপুরে সীতাকে বিয়ে করতে আসলেন তা নিয়ে তার বক্তব্য ভারতের নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
এই বিতর্ক নেপাল-ভারত সম্পর্কের স্পর্শকাতর দিককে আরও জটিল করেছে। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লিপুলেখ, কালাপানি এবং অযোধ্যা নিয়ে এমন মতামত দুই দেশের মধ্যে নতুন উত্তেজনার সূত্রপাত করতে পারে।
নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও জনমতের প্রেক্ষাপটে কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ধারা নির্দেশ করছে। এই পরিস্থিতি দেশীয় রাজনীতিতে ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।