প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১৮:২৭
গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে আবারও ভয়াবহ রক্তপাত ঘটিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। শনিবার সকালে একত্রে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষের উপর চালানো গুলি ও বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন একটি ত্রাণকেন্দ্রে খাবারের আশায় দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইসরায়েলি সেনারা কোনো পূর্বসতর্কতা ছাড়াই ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের সামনে ভিড় করা বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। হতাহতদের অধিকাংশকে দ্রুত আল-আওদা ও আল-আকসা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাতে রয়টার্স জানায়, বেশিরভাগ মৃত্যুর কারণ ছিল গুলির আঘাত ও বোমার স্প্লিন্টার। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, নতুন করে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এরকম হামলায় ইতোমধ্যে ২৭৪ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছেন দুই হাজারেরও বেশি মানুষ।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর দীর্ঘদিনের আগ্রাসন দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শিশু ও নারীসহ নিহতের সংখ্যা ৫৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে দাবি করছে স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ইসরায়েলি বিমান ও স্থল অভিযানে জনবসতির ঘন এলাকা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং চিকিৎসাসেবার তীব্র সংকটের মধ্যে অপুষ্টিতে ভুগছে হাজার হাজার শিশু।
মধ্য গাজার এই হামলার পর আন্তর্জাতিক মহল আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে বড় কোনো হস্তক্ষেপ বা যুদ্ধবিরতির কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এই ঘটনাকে মানবিক বিপর্যয় বলে আখ্যা দিয়েছেন একাধিক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক। বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিদিন যেভাবে বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারাচ্ছেন, তাতে করে গাজা এখন একটি উন্মুক্ত হত্যাকাণ্ডের মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘরবাড়ি হারিয়ে তারা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন এবং প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকেন। নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি বিপদের মধ্যে রয়েছে।
মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলি অবরোধ এখনও বড় বাধা হয়ে আছে। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর দাবি, গাজার জনজীবন স্বাভাবিক করতে হলে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও অবরোধ প্রত্যাহার প্রয়োজন।
অন্যদিকে, ইসরায়েল এই হামলার দায় অস্বীকার করে বলেছে, তাদের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি। তবে নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া ঘটনার প্রকৃত সত্য জানা অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন পর্যবেক্ষকরা।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এ ধরনের হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে এবং একে ঘিরে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
এই হামলা আরও একবার প্রমাণ করে দিয়েছে, গাজায় প্রতিদিন যে মৃত্যু ও ধ্বংস নেমে আসে, তার অধিকাংশই নিরীহ মানুষের ওপর।