ভারত ও পাকিস্তান—এই দুই দেশের সম্পর্ক জন্মলগ্ন থেকেই সাপে-নেউলে। স্বাধীনতার পর থেকে এ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের মাত্রা ক্রমেই খারাপের দিকে গেছে। সম্প্রতি, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন একটি উত্তপ্ত অধ্যায় শুরু হয়েছে। যদিও গত ২৫ বছরে ভারত ও পাকিস্তান সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি, তবুও সীমান্তের উত্তেজনা এবং কূটনৈতিক বৈরিতার কিছুটা কমেনি। বর্তমানে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক প্রস্তুতি এবং পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পরিকল্পনা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করেছে।
গত ২৫ এপ্রিল, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাশ্মীরে হামলার পর ভারত যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এর আগে, ভারতের পেহেলগামে হামলার ঘটনার পর পাকিস্তান ঘোষণা দিয়েছে যে তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করবে। পাকিস্তান করাচি উপকূলের কাছে তাদের 'এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে' এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাবে। পাকিস্তানি নৌবাহিনী জানিয়েছে, ২৪-২৬ এপ্রিলের মধ্যে মিসাইল পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। ভারতের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এই পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
এদিকে, পাল্টা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ভারতও সামরিক তৎপরতা জোরদার করেছে। গত ২৪ এপ্রিল, ভারতীয় নৌবাহিনী মিসাইল ধ্বংসের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ভারতের তৈরি আইএনএস সুরাত থেকে এক নিম্ন-উড্ডয়ন মিসাইল সফলভাবে ধ্বংস করা হয়, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
পাকিস্তানের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের কূটনৈতিক এবং সামরিক শক্তি প্রদর্শনও শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে, দু'দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক হিমশীতল হয়ে পড়েছে এবং একে অপরের কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে। উভয় দেশ তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং সামরিক শক্তি প্রদর্শনের পালা শুরু হয়েছে সমুদ্র ও আকাশপথে।
অন্যদিকে, ভারতের সিন্ধু নদ চুক্তি বাতিলের ঘোষণায় পাকিস্তান পূর্ণ শক্তি দিয়ে এর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে যে, যুদ্ধের প্রস্তুতির পাশাপাশি কূটনৈতিক উত্তেজনাও তুঙ্গে পৌঁছেছে।
এই সকল চলমান উত্তেজনার মধ্যে, ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সাক্ষাৎ পরবর্তী সময়ে দুটি লাল ফাইল জমা দেয়। ফাইল দুটি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। এই ফাইলগুলি কি যুদ্ধের অনুমতি বা ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা, তবে পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কি না, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা উদ্বিগ্ন।
এখনো প্রশ্ন উঠছে—এই উত্তেজনা কি সরাসরি যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে, নাকি কূটনৈতিক মাধ্যমে শান্তির পথ খুঁজে পাওয়া যাবে?