যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর এখনও কোনও রাষ্ট্রীয় সফরে যাননি। তবে শোনা যাচ্ছে, ঐতিহ্য ভেঙে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাজ্যের পরিবর্তে সৌদি আরবকেই বেছে নিতে পারেন তিনি। এর আগেও, নিজের প্রথম মেয়াদে, ট্রাম্প সৌদি আরব সফর করেছিলেন এবং সেটি ছিল তার প্রথম আন্তর্জাতিক সফর। শনিবার এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট নিজেই এই সম্ভাবনার কথা জানান। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শত শত কোটি ডলারের পণ্য কিনতে রাজি হওয়ায় সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের প্রস্তাব পেলে আমি আবারও সেখানেই যাব। ঐতিহাসিকভাবেই সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও নিরাপত্তা অংশীদার।
২০১৭ সালে প্রথম সৌদি আরব সফরে ট্রাম্পকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেই সফরে সৌদি সরকারের সঙ্গে আমেরিকার বড় ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেই সঙ্গে তরবারি নিয়ে ট্রাম্পের ঐতিহাসিক নাচ তখন বেশ আলোচনায় ছিল। এবার দ্বিতীয় মেয়াদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এই বিনিয়োগের সম্ভাবনা নতুন সম্পর্কের জোরালো ভিত্তি স্থাপন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের প্রথম সৌদি সফরের মতো তার দ্বিতীয় সফরও কৌশলগত গুরুত্ব বহন করবে। কারণ, সৌদি আরব মার্কিন অস্ত্রের বড় ক্রেতা এবং তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক দৃঢ়। এছাড়া সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুসংহত করতে চাইছেন ট্রাম্প, যা তার প্রশাসনের জন্য কৌশলগত জয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তবে এই সফরকে ঘিরে কিছু সমালোচনাও রয়েছে। অনেকেই বলছেন, মানবাধিকার ইস্যুতে সৌদি আরবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও, কেবল অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য এই সম্পর্ক দৃঢ় করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিতর্কিত হতে পারে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের ভূমিকা এবং তাদের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সৌদি আরব মধ্যপ্রাচ্যের অনেক ইস্যুতে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়ক হবে। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার প্রভাব মোকাবিলায় সৌদি-আমেরিকা সম্পর্ক আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সৌদি আরব থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা করছে। বিনিয়োগের ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়বে। সৌদি আরবের সঙ্গে নতুন চুক্তিগুলো মার্কিন প্রতিরক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ট্রাম্পের সম্ভাব্য সফরকে ঘিরে সৌদি আরবেও ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ট্রাম্পকে তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং ভবিষ্যতের অংশীদার হিসেবে দেখছেন। সৌদি যুবরাজের নেতৃত্বে দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, যা মার্কিন বিনিয়োগকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
এই সফর শুধু কৌশলগত নয়, বরং অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি প্রমাণ করে যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সৌদি আরব এখনও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি অপরিহার্য অংশীদার। ট্রাম্পের নেতৃত্বে এই সম্পর্ক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে, যা ভবিষ্যতে আরও দৃঢ় এবং ফলপ্রসূ হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।