বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ২০০ আসামির জামিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
উত্তম গোলদার
প্রকাশিত: রবিবার ১৯শে জানুয়ারী ২০২৫ ০৪:৪০ অপরাহ্ন
বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ২০০ আসামির জামিন

পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের বিস্ফোরক মামলায় জামিন পেয়েছেন দুই শতাধিক আসামি। রোববার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর অস্থায়ী আদালতে বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনপ্রাপ্তদের সবাই হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা হয়নি।  


আদালত সূত্র জানায়, রোববার সকাল ১১টার পর বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষ্যগ্রহণ পেছানোর আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যগ্রহণের পক্ষে যুক্তি দেয়। উভয় পক্ষের তর্ক-বিতর্ক শেষে বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে প্রত্যক্ষদর্শী মেজর সৈয়দ মো. ইউসুফ আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।  


২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা সহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। এই ঘটনা দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত। ঘটনার পর হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলার রায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঘোষিত হয়, যেখানে ৮৫০ জনের মধ্যে ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন, ১৫২ জনকে ফাঁসি এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ২৭৮ জন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।  


বিস্ফোরক আইনের মামলায় ২০১০ সালে ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। তবে হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপনকে প্রাধান্য দেওয়ায় বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম দীর্ঘ সময় ধরে স্থগিত ছিল। এই বিলম্বের ফলে বিস্ফোরক মামলায় অভিযুক্ত ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে যায়, যদিও তারা হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছিলেন।  


আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নতুন করে তদন্ত শুরুর দাবি ওঠে। শহীদ পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনার পুনঃতদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২৪ ডিসেম্বর সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করে, যার কাজ সম্পন্ন করার জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।  


বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা পুনঃতদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এত বড় হত্যাকাণ্ডে দোষীদের সঠিকভাবে বিচার না হওয়া অন্যায়।  


পুনঃতদন্তের পাশাপাশি বিস্ফোরক মামলার বিচার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করার জন্য চাপ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা শুধু মামলার আসামি নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্যও যন্ত্রণা নিয়ে আসছে।  


পিলখানার ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। এই ঘটনা সম্পর্কে সঠিক ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা শুধু শহীদ পরিবার নয়, পুরো জাতির জন্য ন্যায়বিচারের বার্তা বহন করবে।