সীমান্ত হত্যা রোধে বিজিবি-বিএসএফ যৌথ পদক্ষেপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জিয়াউল হক জুয়েল (স্টাফ রিপোর্টার)
প্রকাশিত: শনিবার ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
সীমান্ত হত্যা রোধে বিজিবি-বিএসএফ যৌথ পদক্ষেপ

ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালকরা সীমান্ত নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ১৭-২০ ফেব্রুয়ারি চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনা, যৌথ টহল বৃদ্ধি, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধসহ বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেয়, অপরদিকে বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিলেন।  


সম্মেলনে সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফকে এ ধরনের ঘটনা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বাড়ানো এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি করার বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে নতুন স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে যৌথ পরিদর্শন ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  


এছাড়া সীমান্তবর্তী নদীর ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার, ভারত থেকে হঠাৎ পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে সৃষ্ট বন্যা রোধে পূর্ব সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সীমান্তে বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। মাদক ও স্বর্ণ পাচারসহ অন্যান্য চোরাচালান রোধে দুই বাহিনী তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। উভয় পক্ষ সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখার ব্যাপারে একমত হয়েছে।  


সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন রোধে দুই দেশের নাগরিকদের সচেতন করার পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়। মানবপাচার প্রতিরোধে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাচার হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধার ও পুনর্বাসনের বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হয়।  


বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে ‘অ-প্রাণঘাতী’ নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সীমান্ত হত্যা রোধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উভয় বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  


আলোচনায় সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সীমান্ত পরিবেশ নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। দুই বাহিনীর মধ্যে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খেলাধুলা ও যৌথ কূটনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয় উভয় পক্ষ।  


সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে ভারতের দৃঢ় অঙ্গীকার প্রত্যাশা করেন এবং সীমান্ত অপরাধ দমনে উভয় বাহিনীর কার্যকর ভূমিকার ওপর জোর দেন। বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্ত নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।  


সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার হবে এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।