বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তান থেকে মোট ১ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই চাল দুটি আলাদা ক্রয় প্রস্তাবের মাধ্যমে কিনবে সরকার, যা দেশের খাদ্য মজুত বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল এবং পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল আমদানি করা হবে। এই চাল আমদানির জন্য মোট ৫৮১ কোটি ৪১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এই চালগুলি সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য আনা হচ্ছে, যাতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব দুটি অনুমোদনের জন্য তোলা হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল জিটুজি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) পদ্ধতিতে আমদানি করা হবে, যার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাকিস্তান সরকার এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে চাল সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং পরে দুই দেশ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রতি টন চালের দাম ৪৯৯ ডলার নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া, ভারতের থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এই দরপত্রে ছয়টি দরপত্র জমা পড়ে, এবং দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ভারতের মেসার্স গুরুদিও এক্সপোর্টস করপোরেশনের সঙ্গে ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। প্রতি টন চালের দাম ৪৫৪.১৪ ডলার হিসেবে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ২৭ লাখ ৭ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭৭ কোটি ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
এদিকে, বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মজুত বৃদ্ধি এবং বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে বেসরকারি উদ্যোগও চাল আমদানি বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে ৬ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার আশা করছে, দেশে চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের খাদ্য মজুত অনেকাংশে সরকারী উদ্যোগের ওপর নির্ভরশীল, এবং এ ধরনের আমদানি দেশের বাজারে মূল্য বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই ধরনের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম অস্থির থাকে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে এবং দেশের গরিব ও দরিদ্র জনগণের জন্য খাদ্য সংকট কমবে।
এছাড়া, এই চাল আমদানির মাধ্যমে সরকারের খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থাও আরও কার্যকরী হবে। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম ওঠানামা করার কারণে, সরকারের জন্য একটি স্থিতিশীল খাদ্য মজুত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগের ফলে সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা নীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং খাদ্য সংকট মোকাবিলা সহজতর হবে।
এছাড়া, সরকারের খাদ্য মজুত বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতও চাল আমদানিতে আগ্রহী হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চাল আমদানির বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং আঞ্চলিক দেশগুলো থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে দেশের চালের বাজারে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে এবং গ্রাহকদের জন্য সস্তা ও মানসম্মত চাল পাওয়া সহজ হবে।
বিশেষভাবে, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকার দেশটির সঙ্গে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবে, যা ভবিষ্যতে খাদ্য ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই আমদানি শুধু সরকারের খাদ্য মজুত বাড়াবে না, বরং দেশটির দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাল আমদানির উদ্যোগের পাশাপাশি কৃষকদের জন্য সরকারি সহায়তার পরিমাণও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দেশের কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং খাদ্য উৎপাদনে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হওয়া উচিত, যাতে দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য সংকট দূর করা যায়।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার আগামী সময়ে খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আরও কার্যকরী পরিকল্পনা নিতে সক্ষম হবে, যা দেশের বৃহত্তর জনগণের জন্য সহায়ক হবে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।