দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার খট্রামাধবপাড়া ইউনিয়নের মাধবপাড়া গ্রামের অস্থায়ী হিলির হাটের আলু যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। এতে চাহিদা মিটাচ্ছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বাজারের। সকাল ১১ ট থেকে শুরু হয়ে রাত্রি ৮-৯ টা পর্যন্ত এই হাটে চলে আলুর বেচাবিক্রি। প্রতিদিন দুই'শ থেকে তিন'শ শ্রমিক এই হাটে কাজ করে। সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ হাজার মণ আলু কেনাবেচা হয় এখানে। আলুর বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি এখানকার ব্যবসায়ী ও চাষিরা। স্থানীয়রা বলছেন এখানে সকালের চেয়ে বিকেলে হাটে আলু বেচাকেনা বেশি হয়ে থাকে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার মাধবপাড়া গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের চারপাশে বসেছে বিশাল আলুর হাট। শুধু আলু মৌসুমকে কেন্দ্র করে ৩০ থেকে ৪০ দিন চলবে এই হাট। হাকিমপুর ও বিরামপুর থানার কয়েক শত কৃষক হাটের আশপাশে পলি অঞ্চল হওয়ায় সেখানে ব্যাপক আলুর চাষ করেন। ফলে আলু চাষিরা মাধবপাড়া গ্রামের এই হাটে এসে কাঙ্খিত দামে নিজেদের উৎপাদিত এই খাদ্য পণ্যটি ঢাকা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা ও রংপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের কাছে দাম দর করে বিক্রি করতে পারেন। এখানে স্থানীয় প্রায় ১০-১২ আড়ৎদার প্রতিদিন ৩-৪ হাজার মন আলু কিনেন কৃষকের কাছ থেকে। এসব আলুর দাম কোটি টাকার ওপরে। এখানে ৩-৪ শত শ্রমিক এখানে কাজ করে। জমি থেকে আলু তোলা, ধোয়া, বস্তা করে অস্থায়ী হাটে নিয়ে কাজে আরও প্রায় ২০০-২৫০ নারী ও পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানা গেছে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে এখানে এই অস্থায়ী আলুর হাট বসে আরও প্রায় দুই থেকে তিন সপ্তাহ চলবে।
স্থানীয় আড়ৎদাররা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পাইকারদের সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে দিচ্ছে এবং আড়ৎদাররা তাদের হিস্যা বুঝে নিচ্ছে। বর্তমানে এই হাটে রোমানা জাতের আলু প্রতি মণ ২৩০০ টাকা থেকে ২৪৫০ টাকা এবং ক্যারেজ আলু প্রতি মণ ২১০০ টাকা থেকে ২১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি রোমানা আলু ৫৭ থেকে ৬০ টাকা এবং ক্যারেজ আলু প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রথমের দিকে এই হাটে রোমনা জাতের আলু ২৬০০-২৭০০ টাকা মন বিক্রি হয়েছে।
চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে হয়েছে আলুর বাম্পার ফলন। এবার আলুর ভালো ফলন ও আবহাওয়া ভালো থাকায় আগের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা।
অস্থায়ী আলুর হাটে কথা হয় আলুচাষি সেলিম মিয়ার সাথে তিনি বলেন, গতবারে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হয়েছিলো।তাই এবার পাঁচ বিঘা জমিতে রোমানা জাতের আলু চাষ করেছি। এবার ফলন যেমন ভালো হয়েছে তেমনি দাম অনেক ভালো। আজ রোমানা আলু ১৫ মণ বিক্রি করলাম ২৪৫০ টাকা বিক্রি করলাম।
আরেক আলু চাষি মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আজ ক্যারেজ আলু হাটে নিয়ে আসছি। স্থানীয় আড়ৎদারের কাছে ২১৫০ টাকা মণে বিক্রি করলাম। আর এখানকার আড়ৎদাররা তাদের কমিশন নিচ্ছে পাইকারদের কাছ থেকে।
স্থানীয় আড়ৎদার জাহিদ ইকবাল বলেন, আমি এই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা। তাই এ অঞ্চলের কৃষকরা আমার এখানে আলু দিয়ে যায়। অনেক সময় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাইকারদের আলু কিনে দিচ্ছি। এতে আমার প্রতিদিন যে কমিশন আসে এতে আমার খুব সুন্দর ভাবে চলে। আজ আমরা রোমানা আলু প্রতি মণ ২৩০০ থেকে ২৪৫০ টাকা এবং ক্যারেজ আলু ২১০০ থেকে ২১৫০ টাকা মণ কিনছি। তবে এই মূহুর্তে ভারতীয় আলু আমদানি বন্ধ থাকলে কৃষকেরা আরও লাভবান হবে বলে মনে করি।
কথা হয় সিরাজগঞ্জ থেকে আসা আলুর পাইকার নজরুল ইসলামের সাথে তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন রকমের আলু পাওয়া যায় শুনে অনেক দূর থেকে এসেছি। আলু কিনে ট্রাকে করে নাটোর বোনপাড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ বাজারে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
হাটের ইজরার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সদরুল ইসলাম শামীম বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে বা এই অস্থায়ী হাট থেকে যে খাজনা আদায় করা হয় সেগুলো এই ওয়ার্ডের মসজিদে বিতরণ করা হয়।
অস্থায়ী হাটের শ্রমিক সাহাদৎ হোসেন বলেন, প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে রাত্রি ৯-১০ টা পর্যন্ত কাজ করি। এতে প্রতি দিন হাজিরা ১০০০-১০৫০ টাকা পাওয়া যায়।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।