বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী বলেছেন, ইসরাইল একতরফাভাবে সদ্য স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তি লঙ্ঘন করে পবিত্র মাহে রমজানের সেহরীর সময় গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা চালিয়ে সহস্রাধিক নিরীহ মুসলিম নারী, শিশু ও বৃদ্ধকে হত্যা করেছে। অথচ বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দের দৃশ্যমান কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি বলেন, বর্তমান মুসলিম বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো ইরান, তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ যদি একজোটে প্রতিবাদ জানায়, তাহলে শুধু ইসরাইল নয়, বরং তাদের মদতদাতা আমেরিকাও কেঁপে উঠতে বাধ্য হবে। তাই বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি
দুধরচকী এক বিবৃতিতে বলেন, মাহে রমজানের ১৭ তারিখ ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধে মুসলমানরা ঈমানি শক্তির জোরে বিজয়ী হয়েছিল। আজকের মুসলিম উম্মাহর জন্যও বদরের চেতনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইল বদর দিবসকে টার্গেট করে হামলা চালিয়ে মুসলিম অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। এটি যে কোনো সাধারণ হামলা নয়, বরং মুসলিমদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার প্রত্যক্ষ ইন্ধনেই ইসরাইল এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছে। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব একত্র হলে আমেরিকাও তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ব্যর্থ হবে
তিনি বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কী সালতানাতের পতনের পর থেকে মুসলিমদের ওপর অবিচার বন্ধ হয়নি। ইসরাইলকে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠা করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে এক অঘোষিত ক্রুসেড চালানো হচ্ছে। মুসলিমদের ঈমানি দায়িত্ব হলো এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তিনি প্রশ্ন রাখেন, এই অপেক্ষা আর কত দীর্ঘ হবে? ইতিহাসে যেভাবে খলীফা ওমর (রা.) এবং সালাহউদ্দীন আইয়ূবী বায়তুল মুকাদ্দাসকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন, তেমন আরেকজন মহান নেতা কবে আসবেন?
দুধরচকী বলেন, মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ না থাকলে এই হত্যাযজ্ঞ থামবে না। প্রতিদিন গাজায় যে গণহত্যা চলছে, তার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব মুসলিমকে এখনই জেগে উঠতে হবে। দুধরচকী আরও বলেন, মুসলিম বিশ্বের নীরবতা ইসরাইল ও তাদের মিত্রদের আরও উৎসাহিত করছে। তাদের থামাতে হলে মুসলিম দেশগুলোর যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই
তিনি বলেন, কেবল নিন্দা ও বিবৃতি দিয়ে ইসরাইল থামানো যাবে না। বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। মুসলিম দেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি যথেষ্ট শক্তিশালী, যা প্রয়োগ করতে পারলে ইসরাইলকে প্রতিহত করা সম্ভব। তিনি বলেন, মুসলিম উম্মাহকে স্মরণ করতে হবে, এককভাবে কোনো দেশ ইসরাইলের মোকাবিলা করতে পারবে না, তবে সম্মিলিত প্রতিরোধই পারে এই দখলদার শক্তির পতন নিশ্চিত করতে
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের নিরীহ জনগণকে রক্ষা করা শুধু মানবিক নয়, বরং এটি ধর্মীয় এবং ঈমানি দায়িত্বও বটে। মুসলিম বিশ্বকে কেবল প্রতিরক্ষামূলক নীতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে আগ্রাসন রুখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিকে স্বাধীন করার জন্য মুসলিম দেশগুলোর সরকার ও জনগণকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে
দুধরচকী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে মুসলিম বিশ্বকে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ইতিহাস সাক্ষী, ঐক্যবদ্ধ মুসলিম জাতি কখনোই পরাজিত হয়নি। তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্ব যদি আজ সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরো বড় সংকট তৈরি হবে। তাই তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়ান
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।