শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, ৭ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
জেলা প্রতিনিধি-শেরপুর
প্রকাশিত: রবিবার ৬ই অক্টোবর ২০২৪ ১১:১৭ পূর্বাহ্ন
শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, ৭ জনের মৃত্যু

শেরপুরে অব্যাহত বৃষ্টির ফলে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। গত ৪ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বন্যায় এ পর্যন্ত ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এবং অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। রোববার (৬ অক্টোবর) সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি চলতে থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।


পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার এবং চেল্লাখালী নদীর পানি ১৮৫ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। 


স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিজিবির সদস্যরা বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ শুরু করেছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও শনিবার থেকে উদ্ধারকাজে যুক্ত হয়েছেন। নতুন করে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে, এবং ইতোমধ্যে জেলার ৫টি উপজেলার ২৮টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ।


নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান জানান, শনিবার রাতে নকলা উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে, নালিতাবাড়ীতে ৫ জন এবং ঝিনাইগাতীতে ১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। 


শেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার জানিয়েছেন, শুধু ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫৭টি মাছের ঘের ভেসে গেছে, যার ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি টাকার বেশি বলে প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, জেলার অন্তত ৩০ হাজার হেক্টর আমন এবং এক হাজার হেক্টর সবজির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে প্রায় ৭০ হাজার কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।


বন্যার কারণে যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজয়ান জানিয়েছেন, এসব বিদ্যালয়ে কয়েকদিন ক্লাস হবে না, তবে পানি মুক্ত এলাকায় পাঠদান চলবে।


নালিতাবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুম রানা জানান, সেখানে ১২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, যেখানে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যার পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন এবং দুর্গতদের সাহায্যে কাজ করে যাচ্ছেন। 


এদিকে, পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় শেরপুরের বিভিন্ন নদীর পানি আরও বাড়ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বন্যার প্রভাবের কারণে এলাকাবাসীর জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে এবং সরকারের তরফ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।