আওয়ামী ব্যবসায়ীদের আশ্রয়ে দুই দলের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলোচনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
জাহিরুল ইসলাম মিলন
প্রকাশিত: বৃহঃস্পতিবার ১৩ই মার্চ ২০২৫ ১১:২২ পূর্বাহ্ন
আওয়ামী ব্যবসায়ীদের আশ্রয়ে দুই দলের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে আলোচনা

রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইসলামী একটি দল ও একটি নতুন দলের নেতারা শেল্টার দিচ্ছেন এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৈঠকে নেতারা জানান, এই দুই দলকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ঘুস ও দুর্নীতির মাত্রা কমানোর পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন এবং দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন।


বৈঠকে নেতারা বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান স্পষ্ট হচ্ছে। গণপরিষদ নির্বাচন, সেকেন্ড রিপাবলিক ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দাবি তুলে নির্বাচনকে প্রলম্বিত করার চেষ্টা চলছে। তারা মনে করেন, সরকারের একাধিক উপদেষ্টা এই পরিকল্পনার পেছনে কাজ করছেন। অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে নয়, বরং তরুণদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের শক্তিকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে। ফলে সহজে ক্ষমতা ছাড়বে না বা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে না।


বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, সরকার বর্তমানে এনজিওদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তারা মনে করেন, নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে একটি বড় ধাক্কা দেওয়া জরুরি। বিএনপি বিভিন্ন জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


বৈঠকে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র চলছে। বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তারা বুঝতে পেরেছেন, দেশের জন্য ভালো কোনো বার্তা নেই। নেতারা বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নতুন দুটি দলের মাধ্যমে বিএনপির বিরুদ্ধে কাজ করছে। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। তারা মনে করেন, জনগণ শিগগিরই বলতে শুরু করবে যে ‘হাসিনার আমলই ভালো ছিল’। এটি প্রতিরোধ করতে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা জরুরি।


বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, একটি চক্র বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে সক্রিয় রয়েছে। তারা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়, তবে সরকারের ভেতরেও কিছু ব্যক্তি এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন। বিএনপি সরকারের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে এবং দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানাবে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এক ইফতার মাহফিলে বলেন, কারা একটি বিশেষ দলকে অর্থ ও হেলিকপ্টার সুবিধা দিচ্ছে, তা জাতির সামনে প্রকাশ করা উচিত। গণমাধ্যমকে তিনি আহ্বান জানান, তারা যেন এই বিষয়গুলো প্রকাশ করেন এবং কেবল বিএনপির বিরুদ্ধে একতরফা প্রচার না চালান।


বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের বিষয়েও আলোচনা হয়। বিএনপির নেতারা বলেন, সংলাপে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দলগুলোর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি স্পষ্ট হতে হবে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি সংলাপে আমন্ত্রণ পাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।


এছাড়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো চিঠির জবাব প্রস্তুত করছেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফার আলোকে দ্রুত এ বিষয়ে দলের আনুষ্ঠানিক মতামত জানানো হবে।