"যুদ্ধ" গানটি সম্পর্কে জানতে চাইলে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত শিল্পী সিনা হাসান ইনিউজ৭১ কে বলেন, চাইনিজ ফোন দিয়েই ভয়েস দিলাম এ গানে, কারণ আমার হোম স্টুডিও নেই, আর হাতের কাছে যা আছে তাই নিয়েই যুদ্ধে নামতে হয়। এভাবে করার উদ্দেশ্য একটাই, নিরাপদে থেকে নিজের কাজটি করতে হবে, তাহলেই এ যুদ্ধে মানুষ জয়ী হবে।
তিনি বলেন, মানুষ সভ্য দুনিয়া গড়তে গিয়ে ক্ষমতার লোভে গড়ে তুলেছে শাসনের পিরামিড, কিন্তু তাতে প্রকৃতির বেজেছে বারোটা। এখন ৩০/৪০/৫০ হাজার বছর আগের ভয়ংকর জীবানুগুলো বের হচ্ছে বরফ গলে। যার সাথে আদিম প্রানীরাও টিকতে পারেনী, আর আজকের মানুষ তো কোন ছাড়। সব মিলে মানুষ দুনিয়ার উপযোগী দুনিয়া গড়তে পারেনি, গড়েছে আত্মবিধ্বংসী ব্যাবস্থা। তাই করোনা আদৌ আউট অফ নো হোয়ার এসেছে তা কী বলা যায়? হয় এটা নতুন কোন 'বায়ো ওয়ার' এর টেকনিক, অথবা মানুষের প্রকৃতি বিরোধী কর্মের ফলাফল। আর এর দ্বারা আবারো দুনিয়ার বাজার ব্যাবস্থা নতুন করে সাজানো হবে, দুনিয়া চলবে একক হুকুমে, যাকে বলে 'ওয়ান ওয়ার্ল্ড অর্ডার'। এখন জিজ্ঞেস করতে পারেন যে 'চীনে বা পশ্চিমা দেশেও তো মানুষ মরছে', তাহলে বলবো- হ্যা, মরছে, শাসকের কাছে প্রাণের দাম নেই। মানুষ তাদের বিশ্বযুদ্ধেও মরেছে। তাদেরও তো হাজার হাজার হোমলেস আছে, তাতে তো তারা '৩য় বিশ্ব' হয়ে যায়নি। এসবের ফলাফল হলো কে শাসন করবে তার ভাগ বাটোয়ারা। আমরা অপেক্ষা করবো কবে ভ্যাকসিন আসবে তার জন্য। উপনিবেশ স্থাপনে যেমন বিভিন্ন টিকা আর গ্রন্থগত শিক্ষা ছিলো তাদের দখলের অস্ত্র, স্বশরীরে উপনিবেশ উঠে গেলেও শাষন তো তারাই করেছে।
এই গীতিকার আরোও বলেন, আর আমরা এমন সমাজে থাকি যেখানে মানুষ ভাবে যে 'মেয়েদের খোলামেলা চলাচলের অভিশাপ হলো করোনা'! গত ১৭ তারিখে, তখনো কোয়ারেন্টাইন শুরু হয়নি, আমার গর্ভবতী স্ত্রী রাস্তায় হেঁটে ফিরছিলো সে সময় তাকে দুজন ছেলে টিজ করছিলো, সে প্রতিবাদ করলে উল্টো তাকে ধাক্কা মারে এবং সে তাল সামলাতে না পেরে রাস্তায় পড়ে যায় (গুলশান ১ ডিসিসি মার্কেট এর বিপরীতে) আর বলে 'তোদের মতো মাইয়াগো জন্যই অভিশাপ আসে'। কুসংস্কার নামক আফিমে মানুষ অন্ধ। যেসব মানুষ এরকম কূপমন্ডুক তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকিয়ে রাখতে দু ফোঁটা টিকার জলই যথেষ্ট, এটা আপনি আমি না বুঝলেও পিরামিড এর উপরের গদিতে বসা যারা, তারা বোঝে। আর দুনিয়া অলরেডি ওয়ান অর্ডার এ চলে এসেছে। এখন সেই অর্ডার কে দেবে তারই ভাগবাটোয়ারা চলছে।
আমি একজন নৃবিজ্ঞানের ছাত্র, মহামারী, টিকা ও প্রতিষেধকের রাজনীতি অধ্যয়ন করে আমি এই করোনার ভবিষ্যৎ যা দেখতে পাই তাই এ গানে বলার চেষ্টা করেছি।
ইউনিউজ৭১ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো গানের লাইন গুলো-
এককালে যুদ্ধ ছিলো খালি হাতে
যুদ্ধ হতো পাথরে পাথর আঘাতে
তারপরে যুদ্ধ খোলা তরোবারি
কামানের নলের তাকে হত্যাকারী
যুদ্ধ করে অনু
যুদ্ধে পরমানু
যুদ্ধ মাথার লালচে নীল আকাশ
বুলেট নয় বোমা নয়
যুদ্ধ করে ময়দানে ভাইরাস।
যুদ্ধ নিজের হাতে ভাতের থালা
ক্ষুধায় এক শিশুর পেটে আগুন গোলা
যুদ্ধ মায়ের হাতে বিষের শিশি
ওইভাবে মরে গেলেও ভালোবাসি।
ভালোবাসা যুদ্ধ হবার আগেও ছিলো
শেকলে দুনিয়াটা বাধাও ছিলো
সে বাধন চাইছে একক নিয়মনীতি
ক্ষমতার পিরামিডে উর্ধ্বগতি।
পিরামিডে হচ্ছে জমা লাশের সারি
তারপর কয়েক দশক আহাজারি
কখনো যুদ্ধশেষে চুক্তি হলে
কোনদিন হাসবে মানুষ সুযোগ পেলে।
কোনদিন হাসবে প্রতিষেধক পেলে
আবারো হাসবে মানুষ অস্ত্র পেলে
হাসছে এখন কারা
অস্ত্র বানায় যারা
কাঁদছি তবু না ছুঁই মায়ের লাশ
বুলেট নয় বোমা নয়
যুদ্ধ করে ময়দানে ভাইরাস।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।