‘বাহাদুরী’ও ‘ভালোবাসার জ্বালা’ দুইটি ছবি নির্মাতা তিনি। আরো দুইটি ছবি নির্মাণ করে এখন মুক্তির অপেক্ষায়। নানা গল্প নিয়ে যিনি নিজে সিনেমা বানান তিনিই এখন সিনেমার গল্পের মতো। তার জীবনে গল্প নিয়ে তৈরী করা যায় আরেকটা সিনেমা। তিনি হলেন, এসএস মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার ও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার সুজন মিয়া। নায়ক জায়েদ খান, সাইমনও নায়িকা পরিমণি নিয়ে ‘বাহাদুরী’ ও এবং অর্পা ইসলাম ও নতুন এক হিরো নিয়ে ‘ভালোবাসার জ্বালা’ নামে দুটি সিনেমার নির্মাতা সুজন মিয়া। অথচ তার জীবনে ঘটেছে নুতন সিনেমার গল্প। সিনেমা নির্মাতা সুজন মিয়া স্ত্রীর প্রতারনায় শিকার হয়ে এখন পথের বসেছে। নগদ তিন কোটি টাকা ও ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে তারই কাজের ছেলে জুয়েল মাহমুদ রানার সাথে পালিয়েছে সুজন মিয়ার স্ত্রী রুবিয়া খাতুন। ট্রাক চাপায় এক পা হারিয়ে পঙ্গু অবস্থা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালের ডি-ব্লকের ইমাজেন্সীতে ভর্তি আছেন সুজন মিয়া। তার বাম পা কেটে ফেলা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে মোবাইলে মঙ্গলবার জানান, গত ১৯ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জের গাউসিয়া এলাকায় তার তাকে ট্রাকচাপা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে তার স্ত্রীর ভাড়া করা লোকজন। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেলোও তার এক পা হারিয়েছেন।
তিনি জানান, এক সময় তিনি কুয়েত প্রবাসী ছিলেন। সেখানে তিনি টেক্সি চালাতেন। এরমধ্যে ২০০৮ সালে পরিচয় হয় গাজীপুর বাড়ৈপাড়ার দুর্গাপুর এলাকার আহম্মদ আলীর মেয়ে রুবিয়া খাতুনের সাথে। রুবিয়া খাতুনও কুয়েত থাকতো। সেখান থেকে আলাপ, পরিচয়, প্রেম এবং ২০১১ সালে কুয়েতেই তারা বিয়ে করেন। তাদের সংসারে রায়না নামে চার বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। তিনি জানান, কুয়েতে টেক্সি চালিয়ে একটি খাবার হোটেল এবং একটি মুদি জেনারেল স্টোর করেন। এর মধ্যে দেশে ফিরে এসে ২০১৬ সালে সোনারগাঁ উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করেন এবং এই ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। পুরোদমে জনপ্রতিনিধি হওয়াতে কুয়েতে ফিরতে পারেননি তিনি। তার পরিবর্তে কুয়েতে থাকা তার স্ত্রী রুবিয়া দেখাশোনা করতেন হোটেল ও জেনারল স্টোর দুটি। তবে প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মচারীদের বেতন পরিশোধসহ নানাবিধ আইনী সমস্যা সমাধানের জন্য স্ত্রীকে কুয়েতের বিধি অনুযায়ে পাওয়ারনামা দেন সুজন মিয়া।
সম্প্রতি স্ত্রী রুবিয়া খাতুন প্রতারণার মাধ্যমে সুজন মিয়ার কুয়েতের দুটি দোকান বিক্রি করে তিন কোটি টাকা ও ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে তারই কাজের ছেলে জুয়েল মাহমুদ রানার সাথে পালিয়ে যায়। সুজন মিয়া জানান, তার স্ত্রী রুবিয়া খাতুন তাকে না জানিয়ে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি কুয়েত থেকে দেশে আসেন এবং ৭ জানুয়ারি জুয়েল মাহমুদ রানার সাথে পালিয়ে যান। স্ত্রীর দেশে আসা এবং অন্য আরেকজনের সাথে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তিনি তার শ্বশুরবাড়ি গাজীপুরে ছুটে যান এবং সেখানে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়। কিন্ত বাড়িতে ছিলেন না রুবিয়া। মূলত তখন তিনি জুয়েলসহ অনেকটা দূরে আবডালেই ছিলেন। সুজন বলেন, রুবিয়ার দেশে আসার খবরটি তিনি কুয়েতে তার কর্মচারি কয়েকজনের কাছ থেকেই প্রথমে জানেন। তারাই তাকে জানিয়েছেন কুয়েতের হোটেল ও জেনারেল স্টোরটি তিন কোটি টাকায় তার স্ত্রী বিক্রি করে দিয়েছেন। তার স্ত্রীর কাছে ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্করাও রাখা ছিলো তার। স্ত্রী এহেন ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। ৯ জানুয়ারি তাকে তার স্ত্রী ডিভোর্স লেটার পাঠান। এখানেই ক্ষ্যান্ত হয়নি রুবিয়া। স্বামীকে মেরে ফেলার জন্য ভাড়া করে খুনি। ট্রাক চাপায় মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়।
সুজন মিয়া জানান, ১৯ জানুয়ারি তাকে গাড়ি চাপায় হত্যার চেষ্টা চালালেও তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তবে, তার একটি পা কেটে ফেলে দিতে হয়েছে। তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং নারায়ণগঞ্জের আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেন সুজন। তার স্ত্রী রুবিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে তার দায়ের করা দুটি মামলা রয়েছে। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় প্রথমে পঙ্গু হাসপাতাল পরে ল্যাবএইডে চিকিৎসাধিন থাকার পর বর্তমানে সুজন মিয়া ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রুপগঞ্জের গাউসিয়া এলাকায় ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায় ২১ জানুয়ারি রূপগঞ্জ থানায় হত্যার চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেন সুজন। স্ত্রী রুবিয়া খাতুন ও পরকীয়া প্রেমিক জুয়েল রানাকে আসামী করেন। এদিকে তিন কোটি টাকা এবং ৩৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রুবিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং নতুন আরেকটি মামলা দায়ের হওয়ায় অত্যন্ত কৌশলে ইমিগ্রেশনের চোখ ফাকি দিয় ২৩ জানুয়ারি শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে দেশত্যাগ করেন রুবিয়া।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।