ঢাবি কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হয়েছে বুলবুলের মরদেহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: বুধবার ২৩শে জানুয়ারী ২০১৯ ০১:২৫ অপরাহ্ন
ঢাবি কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হয়েছে বুলবুলের মরদেহ

সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে তার মরদেহবাহী গাড়িটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর আগে বেলা পৌনে ১১টায় বুলবুলের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। ১১টার দিকে গার্ড অব অনার শেষে শহীদ মিনারের পাদদেশে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রাখা হয়। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদন কালে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। নিরবতা পালন শেষে তার মরদেহ ঢাবির উদ্দেশে রওনা দেয়। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএফডিসি)। সেখানেও তার জানাজা হবে। এরপর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর আফতাবনগরের নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৬৩ বছর বয়সী আহমেদ ইমতিয়াজ। ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইবুনাল গঠিত হলে তাতে স্বাক্ষ্য দেন এই মুক্তিযোদ্ধা। এরপর খুন হন তার ভাই মিরাজ। ভাই খুন হওয়ার পর থেকে পুলিশি পাহারায় অনেকটা গৃহবন্দী হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় চলতে চলতে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।

অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়ে গত বছরের ১৫ মে তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তাতে তিনি লিখেছিলেন, সরকারের নির্দেশেই ২০১২ সালে তাকে যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় সাক্ষী হিসেবে দাঁড়াতে হয়েছিল। সেখানে সাহসিকতার সঙ্গে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে হয়েছিল ১৯৭১ এ ঘটে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলখানার গণহত্যার সম্পূর্ণ ইতিহাস। আর, ওই গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ৫ জনের মধ্যে আমিও একজন। হত্যা করা হয়েছিল একসঙ্গে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে।

তিনি আরও লেখেন, কিন্তু, এই সাক্ষীর কারণে তার নিরপরাধ ছোট ভাই মিরাজকে খুন করা হবে তা কখনওই বিশ্বাস করতে পারেননি। সরকারের কাছে বিচার চেয়েছিলেন, বিচার পাননি। নিজে এখন একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারায় গৃহবন্দী থাকেন। এ এক অভূতপূর্ব করুণ অধ্যায়। ফেসবুকে পোস্টে আরও রিখেছিলেন, স্টএকটি ঘরে ৬ বছর গৃহবন্দি থাকতে থাকতে তিনি আজ উল্লেখযোগ্য ভাবে অসুস্থ। তার হার্টে ৮টি ব্লক ধরা পড়েছে এবং Bypass Surgery ছাড়া চিকিৎসা সম্ভব না।…।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের লেখা জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে মন যেখানে হৃদয় যেখানে’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘আম্মাজান’ প্রভৃতি। তার সুর করা গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘সেই রেল লাইনটার ধারে মেঠো পথটার পাড়ে দাঁড়িয়ে’, ‘একতারা লাগে না আমার দোতরাও লাগে না’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে’, ‘সুন্দর, সুবর্ণ, তারুণ্য, লাবণ্য’ ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’ প্রভৃতি। এ ছাড়াও তার লেখা, সুর করা ও গাওয়া অসংখ্য গান রয়েছে। 
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন গানের মানুষ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

ইনিউজ ৭১/এম.আর