মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্য আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের নির্দেশ দেওয়ার পর পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এই তিন দেশ। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউম এবং চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে। ট্রাম্প গতকাল এই সংক্রান্ত তিনটি নির্বাহী আদেশে সই করেন, যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে।
মেক্সিকো জানিয়েছে, তারা আমেরিকান পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপসহ অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউম স্পষ্ট করেছেন যে, ওয়াশিংটনের অভিযোগ—মেক্সিকো সরকার মাদক পাচারকারী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মৈত্রী বজায় রেখেছে—পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং অপবাদ ছাড়া কিছু নয়। তিনি জানান, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় মেক্সিকো কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে।
অন্যদিকে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ১৫৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে কানাডা। প্রথম ধাপে ৩০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে এবং বাকি ১২৫ বিলিয়ন ডলারের ওপর শুল্ক আরোপ হবে ২১ দিনের মধ্যে। ট্রুডো বলেছেন, কানাডা সবসময় মুক্তবাজার অর্থনীতিকে সমর্থন করে এসেছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্ক আরোপের কারণে তাদেরও প্রতিক্রিয়া জানানো ছাড়া উপায় নেই।
এদিকে চীনও তাদের কড়া প্রতিক্রিয়ার ঘোষণা দিয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে তারা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট এবং এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম লঙ্ঘন করছে। চীনও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে এবং তাদের বাণিজ্য নীতিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে টানাপোড়েন আরও বাড়তে পারে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। এরই মধ্যে কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের এই প্রতিক্রিয়াকে আমেরিকান ব্যবসায়ীরা উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত সংস্থাটি আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতি যদি দীর্ঘমেয়াদে বহাল থাকে, তাহলে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসন তাদের অবস্থানে অটল থাকবে কিনা, তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। কিছু বিশ্লেষক বলছেন, পাল্টা ব্যবস্থার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এবং বিশ্ব বাণিজ্যে এই উত্তেজনার কী প্রভাব পড়ে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।