ইমাম মাহদী (আ.) এর আগমন: কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী- বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার ১২ই নভেম্বর ২০২৪ ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
ইমাম মাহদী (আ.) এর আগমন: কোরআন ও হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ

আল্লাহর শেষ প্রতিনিধি পৃথিবীর এক মহান সত্য যার প্রতি কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং ওই সকল আয়াতের ব্যাখ্যায়ও বহু রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে নিম্নে তার কিছু আজ আমি হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম:  


যেমন সূরা আম্বিয়ার ১০৫ নং আয়াতে বলা হচ্ছে,  

وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ  


নিশ্চয়ই আমরা তৌরাতের পর যাবুরে উল্লেখ করেছি যে , যোগ্যতা সম্পন্ন বান্দারা পৃথিবীর আমাদের উত্তরাধিকারী হবে। ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: ‘ইমাম মাহদী (আ.) ও তাঁর সাহায্যকারীরা হচ্ছেন সেই যোগ্য বান্দা যারা পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবেন (তাফসীরে কুম্মী খণ্ড- ২ , পৃ.-৫২)।’


সূরা কাসাসের ৫ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:  

﴿ وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَ نَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَ نَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ﴾  

এবং আমরা ইচ্ছা করলাম যাদেরকে পৃথিবীর বুকে (বঞ্চিত) হীনবল করা হয়েছিল তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে এবং উত্তরাধিকারী করতে।


ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: বঞ্চিত বা হীনবল বলতে রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতকে বোঝানো হয়েছে। অনেক প্রচেষ্টা ও কষ্টের পর আল্লাহ এই বংশের মাহদী (আ.)-কে প্রেরণ করবেন এবং তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন এবং শত্রুদেরকে কঠিন ভাবে লাঞ্চিত করবেন (গাইবাতে শেখ তুসী হাদীস ১৪৩ , পৃ.-১৮৪)।  


সূরা হুদের ৮৬ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:  

﴿بَقِيَّةُ اللّهِ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾  

আল্লাহর গচ্ছিত সম্পদই তোমাদের জন্য যতেষ্ট যদি তোমরা মু ‘ মিন হয়ে থাক।  

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন: ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হওয়ার পর কা ‘ বা গৃহে হেলান দিয়ে প্রথমে উক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করবেন। অতঃপর বলবেন: انا بقية الله فی ارضه و خليفته و حجته عليکم  

আমিই পৃথিবীর বুকে আল্লাহর গচ্ছিত সম্পদ , তোমাদের প্রতি তাঁর উত্তরাধিকারী এবং হুজ্জাত। অতঃপর যারা তাঁকে সালাম করবে তারা বলবে: السلام عليک يا بقية الله فی ارضه  


আপনার প্রতি সালাম , হে পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্র গচিছত সম্পদ (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১ , বাব ৩২ , হাদীস ১৬ , পৃষ্ঠা ৬০৩)।  


সূরা হাদীদের ১৭ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:  

﴿اعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ﴾  

জেনে রাখ আল্লাহই ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন৷ আমি নির্দশনগুলি তোমাদের জন্য বিশদভাবে ব্যক্ত করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।  

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন: আল্লাহ তা ‘ আলা ইমাম মাহদী (আ.)-এর নিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীকে পূনর্জীবিত করবেন৷ কেননা অত্যাচারিদের অত্যাচারের মাধ্যমে পৃথিবী মৃত্যুবরণ করেছিল (গাইবাতে নোমানী পৃ.-৩২)।  


হযরত ইমাম মাহদি (আঃ) এর পরিচিতি :

নাম ও বংশ :

উনার প্রকৃত নাম মুহাম্মদ। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬০১)। উপনাম : আবু আব্দুল্লাহ / আবুল কাশেম। উপাধি : মাহদি (আঃ)।  


হাদিসে এসেছে, মাহদি আমার বংশে ফাতেমা’র সূত্রধরে আগমন করবে। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৬০৩/৪২৮৪)।  


হাদিসে আরো এসেছে “মাহদি আমার বংশে হবে। কোনো এক রজনীতে মহান স্রষ্টা তাঁকে ঐশ্বর্য দান করবেন ও সংশোধন করবেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, বিশৃঙ্খলা অধ্যায়; হাদিস নং ৪০৮৫, সনদ সহিহ)।  


উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আশ্চর্য হচ্ছি এ ভেবে যে, আমার উম্মতের মধ্য হতে একটি দল বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করতে অগ্রসর হবে। যখন তারা মরুপ্রান্তর পাড়ি দেবে তখন তাদেরকে জমিনের ভেতর ধসিয়ে দেয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, ব্যবসা অধ্যায়, বাজার পরিচ্ছেদ এবং সহিহ মুসলিম, হা/২৮৮২ ফেতনা অধ্যায়, তিরমিযী হা/১২৭৬) ।  


এখানে বায়তুল্লায় আশ্রয় নেয়া এক ব্যক্তি বলে ইমাম মাহদি (আঃ)-কেই বুঝানো উদ্দেশ্য। কারণ তিনি কুরাইশী এবং কেয়ামত পূর্বমুহূর্ত আল্লাহ তায়ালার সম্মানিত খলিফা।  


জন্ম ও জন্মভূমি :  

তিনি স্বাভাবিকভাবে মানুষের মতই মাতাপিতার ওরসে জন্ম লাভ করবেন। তাঁর জন্মস্থল নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে কানজুল উম্মাল কিতাবের (হা/৩৯৬৭১) দুর্বল একটি রেওয়ায়েত দ্বারা বুঝায় যে, তাঁর জন্মস্থল হবে ‘মদিনা’।  


তবে হযরত ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন “হে কূফাবাসী তোমরা ইমাম মাহদি’র আগমনে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান।” এতে এও বুঝা যায় যে, কূফা শহর তাঁর জন্মস্থল হতে পারে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৩৩১২১ এবং ৩৮৭৯৮)। কিন্তু সহিহ রেওয়ায়েত দ্বারা এটি সুস্পষ্ট নয়। তাই মতভেদ হওয়া স্বাভাবিক।  


ইমাম মাহদির বৈশিষ্ট্য :

তাঁর শারিরীক গঠন মধ্যম আকৃতির হবে। ললাট দীপ্তিময়, উজ্জ্বল, ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট। সম্মুখের উজ্জ্বল দাঁতগুলো ফাঁকা। ঘন দাড়ি বিশিষ্ট। সাদা ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করবেন ইত্যাদি। তখন তাঁর বয়স থাকবে চল্লিশ। (তাবারানী ফিল-কাবীর, হা/৭৪৯৫; এর সনদ দুর্বল হলেও ভিন্ন হাদিস দ্বারা এসব সমর্থিত) ।  


হাদিসে আরো এসেছে “মাহদি আমার বংশধর। তিনি উজ্জ্বল ললাটের ও বাঁকা নাসিকা বিশিষ্ট হবেন। পৃথিবীকে ন্যায় নীতি ও ইনসাফ দ্বারা ভরপুর করে দেবেন। তিনি সাত বছর শাসন করবেন।” (সুনানে আবু দাউদ : হা/৪২৮৫; এর সনদ সহিহ) ।  


যুগে যুগে মাহদি দাবিদার ভন্ডদের আস্ফালন :

বিভিন্ন হাদিসে ইমাম মাহদি (আঃ) এর অবির্ভাবের সুসংবাদ থাকায় একশ্রেণীর অসাধু লোক নিজেদের “মাহদি” দাবি করে বসে। এদের এ লংকাকান্ড প্রায় প্রত্যেক যুগেই দেখা গেছে। কখনো কখনো সাম্রাজ্যবাদ