রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের মেয়েকে বিয়ে না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না হতে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই স্কুলের প্রভাষক দুরুল হুদা। বুধবার রাজশাহী নগরীর টিএফসি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে স্কুলের অধ্যক্ষ শফিউল আলমের বিরুদ্ধে তিনি এই অভিযোগ করেন। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন ওই স্কুলে অধ্যক্ষের স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু।
সংবাদ সম্মেলনে দুরুল হুদা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের অধ্যক্ষ শফিউল আলম ও তার স্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু’র মেয়েকে বিয়ে না করে অন্য জায়গায় বিয়ে করার পর রাবির শিক্ষক না হতে দেওয়ার জন্য নানাভাবে হয়রানি করেছেন। দুরুল হুদার দাবি, অধ্যক্ষ শফিউল আলম বলেছেন বাকির শিক্ষক হওয়া তোমার (দুরুল হুদা) জন্য আকাশ কুসুম কল্পনা। এছাড়াও বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ করেন।
অধ্যক্ষ শফিউল আলমের সঙ্গে আলাপের একটি ফোন রেকর্ড সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। রেকর্ড থেকে জানা যায়, দুরুল হুদাকে চাকরি ছাড়ার জন্য হুমকি দেন অধ্যক্ষ শফিউল আলম। তিনি দুরুল হুদাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের এমন কোনও জায়গা নাই যেখানে আমাদের লোকজন নাই। তুমি যেখানেই থাকো না কেন, ২৪ ঘণ্টা সময় লাগবে না তোমাকে তুলে নিয়ে আসতে। চাকরি না ছাড়লে তোমাকে পুলিশে দেওয়া হবে। তোমার জন্য বেটার হবে চাকরি ছেড়ে দেয়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া তো তোমার জন্য আকাশ কুসুম কল্পনা।’
দুরুল হুদা অভিযোগ করে বলেন, ‘রাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক পদে যেন ভাইভা দিতে না পারি এর অংশ হিসেবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষকের মেয়েকে বিয়ে না করে অন্য জায়গায় বিয়ে করার কারণে পরিকল্পিতভাবে বাসায় ডেকে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
গত বছরের ২০ অক্টোবর দুরুল হুদার বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ শফিউল ইসলামের ছোট মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে নগরীর মতিহার থানায় মামলা দায়ের করা হয়। অধ্যক্ষের স্ত্রী বাদী হয়ে এই মামলা করেন। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ওই দিনই কারাগারে পাঠানো হয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে দুরুল বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাবি স্কুল এন্ড কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করি। এরপর অধ্যক্ষের অনুরোধে তার ছোট মেয়েকে পড়াতে আমি তাদের বাসায় যেতাম। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে কলেজের অধ্যক্ষ শফিউল আলম আমাকে তার চেম্বারে ডেকে তার বড় মেয়ের সঙ্গে আমার বিবাহের প্রস্তাব দেন। তখন বিয়ের প্রস্তাবের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।’
দুরুল হুদা আরো বলেন, ওই ঘটনার কিছুদিন পরে অধ্যক্ষ আবারও আমাকে তার বাসায় ডেকে বিয়ের প্রস্তাব দেন ও আমাকে বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য সাতদিন সময় দেন। এরপর বিয়েতে সম্মত না হয়ে অন্যত্র বিয়ে করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বাসায় ডেকে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন।
দুরুল হুদার অভিযোগ, চাকরি ছাড়ার হুমকি দেওয়ার চারদিন পরও চাকরি না ছাড়লে অধ্যক্ষের স্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়েল ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু তাদের ছোট মেয়েকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মতিহার থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় জামিনে বের হয়ে আসলে অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রী পুনরায় তাকে চাকরি ছাড়ার জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চাপ দেয়াসহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করেন।
এদিকে দুরুল হুদার সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু। তিনি বলেন, ‘সে তার (দুরুল হুদা) অপরাধ আড়াল করার জন্য এসব অভিযোগ করেছে। আমি তার বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়া চালিয়ে যাব। কোনও অবৈধ পথে যাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।’ এদিকে, অধ্যক্ষ শফিউল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।