ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার দিবাগত রাতে শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি ও বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। জানা যায়, ২৬ আগস্ট (সোমবার) রাত সাড়ে ১২ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হল এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের হাতে লোহার রড, পাইপ, লাঠিসহ দেশী-বিদেশীয় অস্ত্র দেখা যায়। ঘটনার এক পর্যায়ে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতা আলোমগীর হোসেন আলো ও জুবায়ের আল মাহমুদের নেতৃত্বে কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ ঘটনায় দুই পক্ষের কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে আহত দুইজনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। অন্যান্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এ দিকে সোমবার বেলা সাড়ে ১০ টায়, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব তাদের গ্রুপের সর্বোস্তেরর নেতাকর্মী নিয়ে প্রশাসনের কাছে নানা অভিযোগ করেন। অভিযোগে তাঁরা বলেন, "ঘটনাটি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। এটাকে পুঁজি করে কিছু অছাত্র ও বহিরাগত ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। আমরা সাংগঠনিকভাবে এর ব্যবস্থা নেবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি অচিরেই এ ঘটনায় জড়িতদের সুষ্ঠু তদন্ত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদক্ষেপ কামনা করেন। এ ছাড়াও তারা আরো বলেন, গতকাল রাতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরের ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অবহেলার কারণে প্রক্টর(ভারপ্রাপ্ত) ড. মোঃ আনিছুর রহমানকে অপসারণের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে দুপুর ১ টার দিকে, পাল্টা অভিযোগ নিয়ে প্রশাসনের সাথে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতৃবৃন্দ সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতের এক পর্যায়ে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতারা বলেন, গতকাল রাতের ঘটনায় বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাকিবের কর্মীরা যে হামলা চালায় তা সত্যি অপ্রত্যাশিত। এ হামলার বিদ্রোহী গ্রুপের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে তাদের দাবি। এই হামলার জের ধরেই মূলত সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। তাঁরা আরো বলেন, এ হামলা ঘটনা যাতে সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত হয় এবং কোন প্রকার পক্ষপাতদুষ্ট না হয় তার জোর দাবি জানাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন,"গতকাল মধ্যরাতে যে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। এ শোকের মাসে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই আর যাই হোক তাঁরা ছাত্রলীগ দাবি করতে পারেনা। ছাত্রলীগের অভ্যান্তরীন কিছু সমস্যা থাকতেই পারে তবে সেটা তাদের সমাধানের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশর বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যেনো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, বিশেষ করে এ শোকের মাসে। এ জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ ক্যাম্পাসে কোন প্রকার যাতে পরিবেশ বিনষ্ট না হয় তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিবো। রাতে যে বিশৃঙ্খলা ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু ও নিরোপেক্ষ তদন্ত করে আমরা বিচারের আওতায় নিয়ে আসবো। এর পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন প্রকার যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, তার জন্য উভায় গ্রুপের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।" এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহাসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন শাকিল আহমেদ সুমন, কামরুজ্জামান খাঁন সাগর, আব্দুর রহিম সরদার ও বিএম রিজওয়ানুল ইসলাম। তদন্ত কমিটিকে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত রির্পোট জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছে।
ইনিউজ ৭১/টি.টি. রাকিব
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।