তিন মাস ধরে বেতন পাননা রায়গঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বুধবার ২৬শে জুলাই ২০২৩ ০৬:০৫ অপরাহ্ন
তিন মাস ধরে বেতন পাননা রায়গঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে সৃষ্টি হওয়া দ্বন্দ্বের কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা তিন মাস যাবত বেতন পাচ্ছেন না। এছাড়া গত দুই ঈদের ও বাংলা নববর্ষের উৎসব ভাতা তারা উত্তোলন করতে পারেননি। এতে একদিকে দীর্ঘদিন যাবত বেতন ভাতা না পেয়ে শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অপরদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।


জানাগেছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে রায়গঞ্জ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করে। অপরদিকে চলতি বছরের ২২ মার্চ সিনিয়র সহকারী শিক্ষক এস এম গোলাম মোস্তফাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত করে।


তার স্বাক্ষরে ১৪জন শিক্ষক ও ২জন কর্মচারীরা নাগেশ্বরী সোনালী ব্যাংক থেকে ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসের বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। এরপর ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, এপ্রিল মাসের বেতন, ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা ব্যাংকে পাঠানো হলেও শিক্ষক-কর্মচারীরা তা উত্তোলন করতে পারেননি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না। 


রায়গঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল হক সরকার বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেনের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর জাল করা, এককভাবে বিদ্যালয়ের জমি বন্ধক রাখা, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্নজনের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

 

এসব অভিযোগের কারণে ম্যানেজিং কমিটি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করে। তিনি আদালতে মামলা করে নিজের পক্ষে একটি রায় নিয়ে এসেছেন। সেই রায়ের বিপক্ষে আপিল করা হয়েছে। তিনি পেশিশক্তির বলে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে আছেন। তার কারণেই শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছেন না।


ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া এসএম গোলাম মোস্তফা বলেন, গত ১৭ এপ্রিল সোহরাব হোসেন লোকজন ভাড়া করে এনে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সহায়তা চাইলে নাগেশ্বরী থানা পুলিশ ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিবেশ শান্ত করেন। ওই ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করছে।


পূর্বের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ম্যানেজিং কমিটি অন্যায় ভাবে আমাকে বরখাস্ত করেছে। দিনাজপুর বোর্ডের পত্র ও আদালতের রায় অনুযায়ী আমি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।


পরিচয় প্রকাশ অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারীরা বলেন, মাসের পর মাস চাকরি করছি কিন্তু বেতন পাচ্ছিনা। তিন মাস যাবত বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। দ্রুত এপ্রিল, মে ও জুনের বেতন এবং ঈদুল ফিতরের উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা ও ঈদুল আজাহার উৎসব ভাতা দেওয়াসহ নিয়মিত বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হোক। 


কয়েকজন অভিভাবক বলেন, স্থায়ী প্রধান শিক্ষক না থাকাতে এবং শিক্ষকরা বেতন না পাওয়াতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে দ্রুত একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।


নাগেশ্বরী সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এরশাদুল হক বলেন, রায়গঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ নিয়ে মামলা চলমান থাকায় ব্যাংকের আইন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতার কাগজ বিদ্যালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি হলে ব্যাংক শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেবে।


উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, ম্যানেজিং কমিটি অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত শিক্ষককে অপসারণের ক্ষমতা রাখে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহবার হোসেনের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেয়েছিল। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদ নিয়ে মামলার কারনে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে।