ঋণখেলাপিদের মাফ করে দেয়া হবে: অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সোমবার ২৯শে এপ্রিল ২০১৯ ১১:০৬ পূর্বাহ্ন
ঋণখেলাপিদের মাফ করে দেয়া হবে: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সকল ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠিয়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতি চালানো যাবে না। আবার সবাইকে মাফও করা যাবে না। ঋণ খেলাপিদের মাফ করে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। ইচ্ছাকৃতভাবে যারা খেলাপি হয়ে যায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অ্যাকশন অবশ্যই নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংক খাতগুলোর রেট অব ইন্টারেস্ট কমানো না গেলে নন পারফমিং লোন কমানো যাবে না। রেট অব ইন্টারেস্ট কমাতে পারলেই আমাদের শিল্প-কারখানাগুলো বেঁচে যাবে। আমাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আমি সকলের স্বার্থে এই কাজটি করতে চাচ্ছি। এরই মাঝে অনেক বিতর্ক হচ্ছে, অনেকে অনেক রকম কথা বলছে। আমরা মাফ করে দিচ্ছি। 

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশনে রবিবার গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, মাফ কিন্তু সারা বিশ্বে করে দেয়। সারা বিশ্বেই ঋণ খেলাপিদের মাফ করে দেয়ার ব্যবস্থা আছে। আমার দেশে কিন্তু মাফ করার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আমাদের দেশের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইন কার্যকর ছিল না। যে কারণে ব্যাংকে ঢুকলে সেখান থেকে বের হওয়ার পথ ছিল না। তাই আমরা আইনগুলো কার্যকর করে সেই আইনি প্রক্রিয়ায় সহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করে সবাইকে এখান থেকে মাফ করার ব্যবস্থা করব।

বিরোধী দলীয় সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ'র (সুনামগঞ্জ-৪) রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত অপর সম্পূরক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১০০ মিলিয়ন ডলারের মতো আমাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে) হ্যাকিং হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ মিলিয়নের মতো আমরা ফেরত পেয়েছি। এখন আমাদের ৬০ মিলিয়ন ডলারের উপরে পাওয়া বাকি রয়ে গেছে। এ বিষয়ে একটা মামলা করা হয়েছে। মামলাটি এখন চলমান রয়েছে। তাই এ বিষয়ে সংসদে কিছু বলা ঠিক হবে না। আহসানুল হক টিপুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যেহেতু পুঁজিবাজার আর আমাদের অর্থনীতি ইন্টারওভেন অ্যান্ড ইন্ট্রিগ্রেটেড। সংগত কারণেই পুঁজিবাজারের জন্য প্রণোদনা থাকবে, অবশ্যই থাকবে। সেখানে কতটা থাকবে আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে অবশ্যই পুঁজিবাজারকে শক্তিশালীভাবে চালানোর জন্য যা কিছুই উপযোগ্য আমরা তাই কিছুর ব্যবস্থা করবো। 

এসময় অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যাংকিং খাতের সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে ও সম্ভাব্য সমাধানও নির্ধারণ করা হয়েছে তাই কোনো কমিশন লাগবে না। তবে পুঁজিবাজার এখন নিয়ন্ত্রণে নেই বলে মনে করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, পুঁজিবাজারটি এখন নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটাও বলবো না। পুঁজিবাজারের যে সব সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করেছি। একে একে সবগুলো সমস্যার সমাধান দেবো। সরকার সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে যেমন যত্নশীল, ঠিক তেমনিভাবে পুঁজিবাজার নিয়েও ততটাই যত্নশীল। আমাদের দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত চাঙ্গা ও শক্তিশালী। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফ আমাদের অর্থনীতি দেখে উচ্ছ্বসিত। তারা অন্যান্য দেশকে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে বলেছে। আমাদের এই এগিয়ে যাওয়া থমকে যাবে যদি পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারি।

ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেট সিঙ্গেল ডিজিটে আনার বিষয়ে সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যদি সিঙ্গেল ডিজিটের উপরে হয় তাহলে যিনি ঋণ নিয়েছেন তিনি শোধ দিতে পারবেন না। আর যারা ঋণ দিয়েছেন তারাও পাবেন না। দিন শেষে হিসেব করলে দেখা যাবে যেটা ৯ শতাংশ ধরা হচ্ছে সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমি মনে করি, আমরা কাজ করছি এর উপরে। শিগগিরই কম্পিটিটিভ রেট, অত্যন্ত কম্পিটিটিভ রেট সারা বিশ্বের সাথে সমন্বিত করে আমরা সেই রেটটি করবো। সেটা যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে আমি মনে করি বাংলাদেশের ইতিহাসে আর্থিক খাতে এটা হবে একটা টার্নিং পয়েন্ট। এর উপর আমরা কাজ শুরু করেছি, এখন বাস্তবায়নের পালা। ব্যাংক এবং ঋণ গ্রহীতা সবার স্বার্থে যেটা সুন্দর হয় আমরা একটা ইকুরিটিয়াম বের করবো। উভয়কে একটা উইন উইন সিচুয়েশন নিয়ে একটা সমাধান করবো। 

সংসদ সদস্য নূর নবী চৌধুরী শাওনের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে বেসরকারি খাতে ৩১টি লাইফ ইন্সুরেন্স, ৪৫টি কোম্পানি নন-লাইফ ইন্সুরেন্স ব্যবসা পরিচালনা করছে। আপাতত নতুন কোনো বেসরকারি লাইফ বা নন-লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি অনুমোদনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পদ্মা ব্যাংক সংক্রান্ত এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফারমার্স ব্যাংক এখন পদ্মা ব্যাংকে ট্রান্সফার হয়েছে। আমরা দেশের কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাক এটা চাই না। আমরা চাই প্রত্যেকটা ব্যাংক সাবলিলভাবে দেশে কাজ চালিয়ে যাক। সেখানে তাদের যে পরিমাণ সাহায্য সহযোগিতা সরকারের পক্ষ থেকে করা দরকার সরকার সেটা অব্যাহত রাখবে।

ইনিউজ ৭১/এম.আর