ঝিনাইদহে তিনজনকে হত্যা, দায় স্বীকার জাসদ গণবাহিনীর
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ত্রিবেনী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর এলাকায় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কথিত সামরিক কমান্ডার হানিফ আলীসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে প্রতিপক্ষের হামলায় তারা নিহত হন। পুলিশ রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করে, যাদের মাথায় গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে, একজন হরিণাকুন্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের শাতাধিক হত্যা মামলার আসামি হানিফ আলী (৫২) ও তার শ্যালক লিটন (৩৫)। অপরজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। ঘটনাস্থল থেকে দুইটি মোটরসাইকেল ও হেলমেট উদ্ধার করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির এই নেতা হানিফ আলী হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন, যার বিরুদ্ধে হরিণাকুন্ডুর কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় আদালত সর্বোচ্চ সাজা দিয়েছিল। উচ্চ আদালতে ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলেও হাসিনা সরকারের সময় প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমায় তিনি মুক্তি পান এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের মৎস্যজীবী লীগের উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি হন। দলীয় পরিচয়ে তিনি এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন এবং পরে বিএনপির ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হানিফ ও তার সহযোগীরা আলমডাঙ্গার কায়েতপাড়া বাওড়ের দখল নিতে চেয়েছিলেন, যেখানে কোটি টাকার মাছ রয়েছে। এ নিয়ে এলাকার বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিরোধের জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে হানিফ ও তার দুই সহযোগীকে হত্যা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩০ বছরে এই বাওড় দখলকে কেন্দ্র করে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, হানিফ একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছিলেন। তিনি হরিণাকুন্ডুর কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান, তিওরবিলা গ্রামের লুৎফর রহমান, তাহেরহুদার আব্দুল কাদেরসহ শাতাধিক মানুষকে হত্যা করেছেন। এমনকি ইজাল মাস্টার নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার পর তার মাথা কেটে ফুটবল খেলার ঘটনাও ঘটান, যা একসময় দেশজুড়ে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর একজন সদস্য গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়, হানিফ ও তার দুই সহযোগী জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন এবং তাদের লাশ রামচন্দ্রপুর ও পিয়ারপুর ক্যানালের পাশে রাখা হয়েছে। বার্তায় আরও বলা হয়, যারা হানিফের সহযোগী ছিল, তাদের সতর্ক হতে বলা হয়েছে, অন্যথায় তারাও একই পরিণতির শিকার হবেন।
ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনাসহ আশপাশের এলাকায় এই হত্যার ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন পর চরমপন্থীদের সংঘর্ষ এবং প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে পুরনো চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর নতুন করে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, এই একই স্থানে ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পাঁচজনকে হত্যা করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় কুষ্টিয়ার আলী রেজা ওরফে কালু ও মহসিন আলী নামে দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। দীর্ঘদিন পর একই এলাকায় ফের একই ধরনের হত্যাকাণ্ড হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং দায়ীদের খুঁজে বের করতে অভিযান চালাচ্ছে।
নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করছে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, বাওড় দখলকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :
বি: দ্র: প্রিয় পাঠক সমালোচনা আপনার অধিকার । তবে ভাষাটাও মার্জিত হতে হবে। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ ।